সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনীত হালদার, হুগলি ও হাওড়া:  ভুয়ো করোনা রিপোর্ট তৈরির চক্রের দুই পাণ্ডাকে গ্রেফতার করল হুগলির চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ। ধৃতদের একজন হাওড়া পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের অস্থায়ী কর্মী। ভুয়ো করোনা পরীক্ষা কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে আরটিপিসিআর টেস্টের ফাঁকা ফর্ম এবং ব্যবহৃত কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের শিশি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে মহামারী আইনে মামলা রুজু হয়েছে। ১৭০০ টাকা ফেললেই চটজলদি  RTPCR টেস্ট! সব দায়িত্ব ক্লিনিকের! একেবারে বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাবেন ক্লিনিকের কর্মী। লালারস পরীক্ষা করে খুব দ্রুত বাড়িতেই পৌঁছে দেওয়া হবে রিপোর্ট! ফেসবুকে এই মর্মে ফাঁদ পেতে করোনা পরীক্ষার নামে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার অভিযোগ উঠল দুই যুবকের বিরুদ্ধে।


অভিযোগকারী বলেছেন,আমি এবং আমার স্বামী দুজন পজিটিভ হই। টেস্টের জন্য কিট পাচ্ছিলাম না। কিটের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছিলাম। ও আমাদের বাড়িতে আসে। ৩৪০০ টাকা নিয়ে যায়। পরে বুঝতে পারি ভুয়ো। কমপ্লেন করি। যাতে এমন অপরাধ আর না করে।


তদন্তে নেমে অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায় এবং প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী নামে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে মহামারী আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায়  হাওড়া পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের চুক্তিভিত্তিক কর্মী। এবিষয়ে হাওড়া পুরকর্তৃপক্ষের বক্তব্য, কোনও রকম অন্যায় বরদাস্ত করবেন না তাঁরা।


করোনার মারণ-তরঙ্গে অসহায় মানুষ। দুর্বার গতিতে ছুটছে সংক্রমণের রথ। সব হাসপাতাল, ক্লিনিক যখন উপচে পড়ছে, তখন করোনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন সবাই। সেই অসহয়তার সুযোগ কাজে লাগিয়ে মুনাফা লোটার ফাঁদ পেতে বসেছে কিছু চক্র। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে


প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, অর্ঘ্য ও প্রসেনজিতের ভুয়ো করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে আরটিপিসিআইপরীক্ষার ফাঁকা ফর্ম, র‍্যাপিড কোভিড টেস্টিং কিট, ব্যবহৃত কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের শিশি, পিপিই কিট, এবং সিরিঞ্জ উদ্ধার হয়েছে।


আর তা থেকেই উঠছে একাধিক প্রশ্ন। আরটিপিসিআই পরীক্ষার ফাঁকা ফর্ম জালিয়াত চক্রের হাতে এল কীভাবে?প্রতারকরা কী র‍্যাপিড কোভিড টেস্ট করেই তা আরটিপিসিআর বলে চালাচ্ছিল?ব্যবহৃত কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের কন্টেনারই বা কীভাবে বাইরে এল?


রাজ্যের একাধিক জায়গা থেকে ইতিমধ্যেই করোনা পরীক্ষার নামে প্রতারণার অভিযোগ সামনে এসেছে। পজিটিভ রোগীকে নেগেটিভ ঘোষণার মতো ভুলভাল রিপোর্টও সামনে আসছে। এই পরিস্থিতিতে বারবার আইসিএমআর অনুমোদিত সংস্থায় সরাসরি যোগাযোগ করে করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। হুগলির করোনা প্রতারণা চক্রে আর কারা জড়িত তার সন্ধানে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।