কলকাতা: গরু পাচারের মামলায় বিএসএফ-কাস্টমসের পাশাপাশি প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা। গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, বিভিন্ন রাজ্য থেকে গরু আসে পশ্চিমবঙ্গে। কিছুদিন লুকিয়ে রেখে তা নিয়ে যাওয়া হয় সীমান্তে। কিন্তু, পুলিশের যোগসাজস ছাড়া কি এসব সম্ভব? প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।

গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে এক বিএসএফ আধিকারিককে। গরু পাচারের সিন্ডিকেটের হদিশ মিলেছে ঘুষ মামলায় ধৃত আর এক বিএসএফ আধিকারিকের সম্পত্তির উৎস খুঁজতে গিয়ে। গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, গরু পাচারকাণ্ডে সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন কয়েকজন কাস্টমস অফিসারও।

পুরো বিষয়টি নিয়েই তদন্ত করছে সিবিআই। তবে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, গরু পাচার আটকানোর দায় কি শুধুই কেন্দ্রীয় সংস্থার? সীমান্তে পাচার আটকানোর দায়িত্ব অবশ্যই বিএসএফ এবং কাস্টমসের। কিন্তু, সীমান্ত অবধি যে রাস্তা দিয়ে গরু আনা হচ্ছে, তা তো রাজ্য পুলিশের অধীনে। সূত্রের দাবি, ভারত থেকে বাংলাদেশে যত সংখ্যক গরু বা মোষ পাচার হয়, তার অধিকাংশ আসে রাজস্থান, পঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, মধ্য প্রদেশ, অন্ধ্র প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, অসম, ঝাড়খণ্ড, বিহারের মতো রাজ্য থেকে। কয়েকশ কিলোমিটার রাস্তা পার করে, একাধিক রাজ্যের সীমা পেরিয়ে গরু বোঝাই ট্রাকগুলি পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছোয়। রাজ্য পুলিশের সঙ্গে পাচারকারীদের যোগসাজশ না থাকলে কি এটা সম্ভব?

সূত্রের দাবি, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, বিহার থেকে মূলত গরু আসে বীরভূমের ইলামবাজারে। তারপর ছোট গাড়িতে গরু পাঠানো হয় মুর্শিদাবাদের নিমতিতার মহলদারপাড়া এবং মালদার বৈষ্ণবনগর থানার চালাকপাড়ায়।

বীরভূম থেকে মুর্শিদাবাদের দূরত্ব একশ কিলোমিটার। মালদার দূরত্ব প্রায় একশ আশি কিলোমিটার। পুলিশের মদত না থাকলে এতটা রাস্তা পেরিয়ে গরু বোঝাই ট্রাক সীমান্ত অবধি নিয়ে যাওয়া কি আদৌ সম্ভব? প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা গরু উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী গ্রামে লুকিয়ে রাখা হয়। তারপর সুযোগ বুঝে সেগুলিকে সীমান্তে নিয়ে গিয়ে, বাংলাদেশে পাচার করে দেওয়া হয়।

দিনের পর দিন এই কারবার চলে, অথচ পুলিশের কাছে খবর পৌঁছোয় না, এমনটা কি আদৌ সম্ভব? প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

সিবিআই সূত্রে দাবি, গরু পাচারকাণ্ডের তদন্তে নেমে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে সীমান্ত অবধি গরু নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতি দফায় ডিআইজি পদমর্যাদার কয়েকজন অফিসারকে ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা দেয় পাচারকারীরা। বিভিন্ন থানার ওসি কিংবা আইসি-দের কাছে পৌঁছোয় প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা।

এ রাজ্যে এই টাকার ভাগ কারা পেয়েছে? তদন্তে তা খুঁজে বার করার চেষ্টা হচ্ছে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি।