Trump-Zelensky Meeting: প্রকাশ্যে মেজাজ হারালেন, বেরিয়ে যেতে বললেন জেলেনস্কিকে, ট্রাম্প কি জিতিয়ে দিলেন পুতিনকে?
Russia-Ukraine War: নয় নয় করে তিন বছর ধরে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে।

ওয়াশিংটন: সম্মুখসমর থেকে ঠান্ডা লড়াই, আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতে কম ওঠাপড়ার সাক্ষী হয়নি পৃথিবী। কিন্তু দুই দেশের রাষ্ট্রনেতা প্রকাশ্যে বাকবিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন, এক পক্ষ অন্য পক্ষকে বেরিয়ে যেতে বলছেন সর্বসমক্ষে, এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাক্ষাৎ তাই সবদিক থেকেই বেনজির ঘটনা হয়ে রইল বৈশ্বিক রাজনীতিতে। ওভাল অফিসের ঘটনায় এই মুহূর্তে দ্বিধাবিভক্ত আন্তর্জাতিক রাজনীতি। আর সেখানে উপস্থিত না থেকেও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আনুষ্ঠানিক ভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইতি না পড়লেও, এই বেনজির পরিস্থিতিতে পুতিনকে বিজয়ী ঘোষণা করে দেওয়া যায় বলে মত আন্তর্জাতিক মহলের। (Trump-Zelensky Meeting)
নয় নয় করে তিন বছর ধরে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। সেই যুদ্ধে এযাবৎ ইউক্রেনের পাশেই ছিল আমেরিকা। কিন্তু ট্রাম্প দ্বিতীয়বার আমেরিকার মসনদে ফেরার পর থেকে সমস্ত হিসেবনিকেশ পাল্টে যাচ্ছে। সেই আবহে শুক্রবার ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে ওভাল অফিসে বৈঠক করতে পৌঁছন জেলেনস্কি। কিন্তু সেখানে তাঁর উপর কার্যত চড়াও হতে দেখা যায় ট্রাম্প এবং আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকে। যে খনিজ চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, তাতে সই করা দূর, বরং পুতিনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে কার্যতই চেপে ধরা হয় জেলেনস্কিকে। সেই নিয়ে জেলেনস্কি নিজের মতামত জানাতে গেলেও, কার্যত ধমক দেওয়া হয় তাঁকে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলেও, যুদ্ধের জন্য কার্যত ইউক্রেনকেই দায়ী করেন ট্রাম্প। সেই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হলে, গোটা পৃথিবীর সংবাদমাধ্যমের সামনে জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। (Russia-Ukraine War)
হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না পুতিন। তিনি ছিলেন মস্কোয়, ওয়াশিংটন থেকে প্রায় ৭৮০০ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু এই গোটা ঘটনায় তিনিই শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর হাসি হাসলেন বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব অন্তত তেমনই মনে করছেন। জেলেনস্কিকে অপদস্থ না করে রাশিয়ার উপর চাপসৃষ্টি করা উচিত বলে মত তাঁর। তাঁর কথায়, “এটা কূটনৈতিক ব্যর্থতা। এতে একজনই জয়ী হয়েছেন, যিনি ওখানে উপস্থিত পর্যন্ত ছিলেন না…তিনি ভ্লাদিমির পুতিন।” গোটা ঘটনায় তিনি শুধুমাত্র স্তম্ভিত নন, দুঃখিত বলেও জানিয়েছেন তিনি। আমেরিকার ভূমিকার সমালোচনা করে স্টাব বলেন, “আজকাল ডাঁয়ে, বাঁয়ে যেমন তেমন করে চুক্তি হয়ে যাচ্ছে। খনিজ চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, তাও হয়নি।” স্টাবের মতে, এই মুহূর্তে এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে পৃথিবী। এভাবে চললে সব কিছু শান্ত হতে কয়েক বছর সময় লেগে যাবে।
একই কথা শোনা গিয়েছে ইউক্রেনের সাংসদ ওলেক্সি গনচারেঙ্কোর মুখে। আমেরিকা জেলেনস্কির সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তাতে রাশিয়ার সাহস আরও বেড়ে যাবে বলে মত তাঁর। ট্রাম্প এবং জেলেনস্কির সাক্ষাৎকে ‘বিপর্যয়’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পরিবর্তে সকলে নিজের অহং জাহির করতে ব্যস্ত ছিলেন বলে মনে হয়েছে। ইউক্রেনে প্রতিদিন আমাদের মৃত্যু হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আমেরিকার সহযোগিতা প্রয়োজন। কাল যা হল তাতে আমেরিকা বা ইউক্রেন জয়ী হয়নি, জয়ী হয়েছেন পুতিনষ পৃথিবীতে তিনিই এই মুহূর্তে সবচেয়ে খুশি। আর পুতিন খুশি হওয়ার অর্থ বাকিদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। খুব খারাপ পরিস্থিতি। ইউক্রেনের জন্য তা যেমন খারাপ, আমেরিকার জন্যও খারাপ। বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।”
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মারও জেলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়েছেন। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘উনি (স্টার্মার) ইউক্রেনের প্রতি সমর্থনে অবিচল। দীর্ঘমেয়াদি শান্তি, সার্বভৌমিকতা এবং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য যা করণীয়, তা করছেন উনি’। ফোনে স্টার্মার ট্রাম্প এবং জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানা গিয়েছে। জার্মানির চ্যান্সেলর হতে চলা ফ্রেডরিক মার্ৎজ জানিয়েছেন, এই কঠিন সময়ে তিনি ইউক্রেনের পাশে আছেন। তাঁর বক্তব্য, “ভয়াবহ যুদ্ধে আক্রমণকারী এবং পীড়িত কে, তা গুলিয়ে ফেললে হবে না।” একই কথা শোনা যায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাকরেঁর মুখে। তাঁর কথায়, “এখানে আগ্রাসী শক্তি হল রাশিয়া। আক্রান্ত ইউক্রেন। যাঁরা সাহায্য করেছেন, তাঁদের সকলকে ধন্য়বাদ। কিন্তু গোড়া থেকে যাঁরা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের সম্মান জানানো আমাদের কর্তব্য।”
রাশিয়া যদিও জেলেনস্কিকে কটাক্ষই করেছে, যা তাদের থেকে প্রত্যাশিত বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক মহলে। এই মুহূর্তে যে পরিস্থিতি, তা সুবিধাজনক ঠেকছে না যে, তা একবাক্যে মানছেন কূটনীতিকরাও। তাঁদের মতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের উপর নেমে আসা সবচেয়ে বড় সামরিক সঙ্কট। তিন বছরে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন আমেরিকা এবং ইউরোপ অস্ত্রশস্ত্র জুগিয়ে সাহায্য় করেছে বলেই যুদ্ধে হার না মেনে রাশিয়ার মোকাবিলা করতে পেরেছে ইউক্রেন। এখনও পর্যন্ত ইউক্রেনের পাশে রয়েছে ইউরোপ। কিন্তু ট্রাম্পের জমানায় আমেরিকা নিজের অবস্থান থেকে সরছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা।






















