ব্রাসেলস: মা আসছে.. এই শব্দটাই মন ভাল করে দেওয়ার যাদুকাঠি। পেঁজা তুলোর মেঘ, কাশ ফুল আর তার সঙ্গে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি জানিয়ে দিচ্ছে উমা বরণের (Durga Puja 2022) সময় এসেছে। আকাশে বাতাসে আগমনী সুর জানিয়ে দিচ্ছে, একটা বছরের অপেক্ষার অবসান। পুত্র-কন্যাদের নিয়ে বাপের বাড়ি ফিরছেন উমা। আর বাঙালিও প্রস্তুত আনন্দ উৎসবে সামিল হতে। তবে এই উন্মাদনা যে শুধু এই বাংলাতেই রয়েছে তেমনটা মোটেও নয়। সদূর ইউরোপেও (Europe) একইভাবে পূজিত হবেন মা। ব্রাসেলসের আকাশে বাতাসেও পুজোর গন্ধ এসেছে।
তেরো পার্বণের দুর্গাপুজো: কথায় বলে, ‘বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ।’ বাঙালি রয়েছে, অথচ উৎসব-আনন্দ সমাগম হবে না, এমনটা সাধারণত দেখা যায় না। বহু বছর ধরেই ইউরোপের মাটিতে পাড়ি দেন মা দুর্গা। এবার বেলজিয়ামের মাটিতে দুর্গাপুজোর আয়োজন করছে, প্রবাসী বাঙালিদের সংগঠন তেরো পার্বণ। প্রবাসের অন্যান্য পুজোর তুলনায় বয়সে অনেকটাই নবীন এই পুজো। কিন্তু অভিজ্ঞতার নিরিখে নবীন হলেও, কোনও খামতি রাখতে নারাজ পুজো উদ্যোক্তারা। পুজোর প্রস্তুতি তুঙ্গে ব্রাসেলসের মাটিতে। বেলজিয়ামে ব্রাসেলস আর এই বঙ্গে যেন মিলেমিশে একাকার। করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর শুরু হয়েছিল পুজো। আড়ে বহরে সেই পুজো ছোট হলেও উন্মাদনায় খামতি ছিল না। এরপর একে একে বিজয়া সম্মেলনী, বর্ষ বরণ, বসন্ত উৎসব করেছে বাঙালিদের এই মঞ্চ। একটা বছর পেরিয়ে ফের মাতৃ আরাধনার সময়।
বেলুড় মঠের রীতি মেনে পুজোর আয়োজন: প্রবাসে পুজো মানেই মূলত সপ্তাহান্তের পুজোর চেনা ছবি। কর্মব্যস্ত জীবন সামলে উইকএন্ডের পুজোই সাধারণত করে থাকেন প্রবাসী বাঙালিরা। কিন্তু সেপথে না গিয়ে স্রোতের বিপরীতে হাঁটছেন তেরো পার্বণের উদ্যোক্তারা। তাদের পুজোয় মিলবে, বেলুড় মঠের আবহ। পৌরহিত্যের দায়িত্বে পুরুষদের পাশাপাশি রয়েছেন এক মহিলাও। মূলত তন্ত্র ধারকের ভূমিকায় থাকবেন তিনি। পঞ্জিকা মেনে মা দুর্গার আরাধনার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত তাঁরা। তেরো পার্বণের সদস্য এবং এই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা দিব্যেন্দু মল্লিক জানাচ্ছেন, “উইকএন্ডে নয়, আমরা রীতি মেনে ৪দিনেরই পুজোর আয়োজন করেছি। মূলত বেলুড় মঠের রীতিকে সামনে রেখেই পুজো করা হবে। চালচিত্র সহ এবছর প্রতিমা প্রায় ৯ ফুটের। সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয় হল, এবছর আমাদের পুরোহিতের সঙ্গে তন্ত্র ধারক হিসেবে থাকবেন একজন মহিলা। যিনি অব্রাহ্মণও বটে। যা বেলজিয়ামে এই প্রথম। আমাদের মূল লক্ষ্য জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে উৎসবের আয়োজন।’’ ব্রাসেলসের এই পুজোয় তন্ত্র ধারকের ভূমিকায় থাকছেন বঙ্গ তনয়া রিয়া মান্না। কেমন ভাবে চলছে প্রস্তুতি? রিয়া জানাচ্ছেন, "এই ইচ্ছেটা অনেকদিন ধরেই মনের মধ্যে ছিল। তবে এটাই প্রথমবার। পুরোহিতের একজন তন্ত্র ধারক থাকেন, সেই ভূমিকাই পালন করব আমি। সংস্কৃতের ছাত্রী, গানও শিখেছি। ফলে কাজটা শিখতেও সুবিধা হচ্ছে। তার থেকেও বড় বিষয়, এখানে সবাই খুবই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তাই এই কাজটা করতে পেরেছি।''
দুর্গাপুজো ঘিরে উন্মাদনা তুঙ্গে: ইতিমধ্যেই মা পাড়ি দিয়েছেন ব্রাসেলসে। শিল্পী সনাতন পালের তৈরি দুর্গা প্রতিমা কুমোরটুলি থেকে উড়ে গিয়েছে সোজা ইউরোপের মাটিতে। বাঙালি মানেই পেট পুজো তার সঙ্গে হইহই। পুজোর চারটে দিন থাকছে হরেক রকম পদ। পাতুরি, কালিয়া, লুচি, মাংস থেকে ফুচকার সমাগম হবে পুজোর কটা দিন। এক বছর পর ফিরছেন মা, তা কচিকাঁচাদের হইচইয়ের শেষ নেই। পিছিয়ে নেই বয়সে বড়রাও। বাড়ির কাজ, অফিস, পড়াশোনা সামলে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2022: মেয়ের হাতে মায়ের আরাধনা, প্রবাসের মাটিতে আত্মজা রূপে আত্মপ্রকাশ মা দুর্গার