প্য়ারিস: হিজাব বিতর্কে এবার তপ্ত প্যারিস। প্যারিসের ঐতিহ্য আইফেল টাওয়ারকে হিজাব পরানো ঘিরে বিতর্ক। পোশাকের স্বাধীনতার বিজ্ঞাপন হিসেবে আইফেল টাওয়ারকে হিজাব পরানোর অ্যানিমেশন তৈরি করেছিল ডাচ ফ্যাশন ব্র্যান্ড Merrachi. আর সেই নিয়ে এই মুহূর্তে দ্বিধাবিভক্ত গোটা ফ্রান্স। বিজ্ঞাপনটিকে 'বিপজ্জনক' বলে উল্লেখ করেছেন দেশের রাজনীতিকরা। বিজ্ঞাপনটি ফ্রান্সের মূল্যবোধ, সংস্কৃতির পরিপন্থী বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। ( Eiffel Tower Wearing A Hijab)
নেদারল্যান্ডসের পোশাক সংস্থা Merrachi সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি অ্যানিমেটেড বিজ্ঞাপন পোস্ট করে। বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, আইফেল টাওয়ারের গায়ে চাপানো রয়েছে আবায়া। সেই সঙ্গে হিজাবের আকারে আইফেল টাওয়ারের মাথা ঢেকে দিচ্ছে লম্বা দৈর্ঘ্যের আর একটি কাপড়। হিজাব পরার স্বাধীনতার সপক্ষেই ওই বিজ্ঞাপ নটি তৈরি করা হয়, সেই মতো প্রচার চালাতে তৈরি হয় বিশেষ বিজ্ঞাপনটি। ইনস্টাগ্রামে সংস্থার তরফে বিজ্ঞাপনটি পোস্ট করে লেখা হয়, 'দেখা মিলল: আইফেল টাওয়ার Merrachi-র পোশা পরেছে। মাশাআল্লাহ্, আইফেল টাওয়ারও শালীন পোশাকের ফ্যাশন আপন করে নিয়েছে'। (Controversial Eiffel Tower Advertisement)
গত কয়েক বছরে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের রক্ষণশীল পোশাক নিয়েও বিতর্ক দেখা গিয়েছে। স্নানপোশাক, রোজকার পরিধান, পরীক্ষা হলে হিজাব পরে ঢোকা, বিতর্কের শেষ নেই। সেই আবহেই ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা যাতে নিজেদের পছন্দের পোশাক পরার স্বাধীনতা পান, সেই লক্ষ্যেই বিজ্ঞাপনটি তৈরি করা হয়। কিন্তু সেটি সামনে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এই শালীন-অশালীন প্রশ্নেই মূলত বিতর্ক শুরু হয়েছে। কোনটা শালীন, কোনটা অশালীন, সেটা ঠিক করার অধিকার ওই সংস্থাকে কে দিল, উঠছে প্রশ্ন। ফ্রান্সের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে। সেখানে খোলামেলা পোশাক পরতে পছন্দও করেন মানুষজন। সেই নিয়ে তেমন ওজর-আপত্তি দেখা যায় না। তাই এহেন বিজ্ঞাপনটি জোর করে ফ্রান্সের সংস্কৃতির উপর ইসলামি রক্ষণশীলতা চাপিয়ে দিতে চাইছে বলে মত অনেকের।
ফ্রান্সের সাংসদ লিজেত পোলেত দক্ষিণপন্থী ন্যাশনাল ব়্যালি পার্টির সদস্য। তাঁর মতে, বিজ্ঞাপনটি ফ্রান্সের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যের গোড়ায় আঘাত হেনেছে। আইফেল টাওয়ারের মাথা হিজাবে ঢেকে দেওয়ার দুঃসাহস মেনে নেওয়া যায় না বলে মত তাঁর। Merrachi আইফেল টাওয়ার হাইজ্যাক করেছে, বিজ্ঞাপনটি যথেষ্ট উস্কানিমূলক বলেও দাবি করেন তিনি।
একই সুর ধরা পড়ে লিজেতের সতীর্থ জেরম বুসনের গলায়। বিজ্ঞাপনটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পরিকল্পনা বলে উল্লেখ করেন তিনি। ফ্রান্সে Merrachi-র সমস্ত স্টোর বন্ধ করে দেওয়ার দাবি তুলেছেন Citizen's Political Movement-এর প্রতিষ্ঠাতা, অর্থনীতিবিদ ফিলিপ মুরার। Merrachi-র ওয়েবসাইটও প্রান্সে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু মানুষ যদিও বিজ্ঞাপনটিকে সাধুবাদ জানিয়েছে। ফ্রান্সে মুসলিম মহিলাদের ধর্মাচরণ নিয়ে ফ্রান্সের যে নীতি, এই বিজ্ঞাপন তাকে চ্যালেঞ্জ করছে বলে মত তাঁদের।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে গত কয়েক বছরে ফ্রান্সে বার বার বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ২০০৪ সালে ফ্রান্স সরকার ধর্মীয় প্রতীক ধারণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। স্কুলে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে ধরে রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়। ২০১০ সালে ফ্রান্সে আইন পাস করে মুখাবরণ নিষিদ্ধ করা হয়। জনসমক্ষে হিজাব থেকে মাস্ক, হেলমেট, বোরখা, নকাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়। ২০১৪ সালে সেই আইন বহাল রাখে European Court of Human Rights. অতি সম্প্রতি ফ্রান্স সরকার স্কুলে আবায়া পরাও নিষিদ্ধ করে, মুসলিম মহিলারা যে ঝিলে পোশাক পরেন।