নয়াদিল্লি: ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রাক্তন আট অফিসারকে মৃত্যুদণ্ড। চরবৃত্তির অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিল কাতার। একাধিক বার তাঁদের জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছিল। দফায় দফায় বাড়ানো হয় বেফাজতের মেয়াদ। শেষ মেশ, বৃহস্পতিবার আটজনকেই মৃত্যুদণ্ড শোনাল কাতারের একটি আদালত। নির্দেশ আসার পর তৎপরতা বেড়েছে দিল্লিতে। আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে দিল্লি।


বেশ কয়েক মাস জেলে বন্দি রাখার পর ওই আট ভারতীয়কে সাজা শুনিয়েছে কাতারের আদালত। অভিযোগ ইজরায়েলের হয়ে কাতারের গোপন সাবমেরিন প্রোগ্রামের তথ্য হাসিল করছিলেন তাঁরা।  সেই গোপন তথ্য ইজরায়েলের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ। তাতেই গ্রেফতার করা হয় হয় ওই আটজনকে। ধৃতদের মধ্যে পূর্ণেন্দু তিওয়ারি নামের এক প্রবাসী ভারতীয় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাত থেকে প্রবাসী ভারতীয় সম্মান পুরস্কারও পেয়েছিলেন। 


কাতার আদালতের নির্দেশে কার্যতই হতবাক দিল্লি। কোন মামলায় ওই চারজনকে জেলে রাখা হয়েছে, সেটা পর্যন্ত জানানো হয়নি বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার বিদেশমন্ত্রকের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, "মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশে আমরা হতবাক। রায়ের সম্পূর্ণ প্রতিলিপির জন্য অপেক্ষা করছি। ধৃতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। কথাবার্তা চলছে আইনজীবীদের সঙ্গেও। সবদিক খতিয়ে দেখছি আমরা।"


যে আট জন প্রাক্তন নৌ আধিকারিককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন, ক্যাপ্টেন নভতেজ সিংহ গিল, ক্যাপ্টেন সৌরভ বশিষ্ঠ, কম্যান্ডার পূর্ণেন্দু তিওয়ারি, ক্যাপ্টেন বীরেন্দ্রকুমার বর্মা, কন্যান্ডার সুগুণাকর পাকালা, কনম্যান্ডার সঞ্জীব গুপ্ত, কম্যান্ডার অমিত নাগপাল এবং নাবিক রাগেশ।  এঁদের মধ্যে অনেকে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজেও নেতৃত্ব দিয়েছেন একসময়। কাতারের সশস্ত্রবাহিনীকে প্রশিক্ষণ পরিষেবা প্রদান করা দাহরা গ্লোবাল টেকনোলজিস অ্যান্ড কনসালটেন্সি সার্ভিসেস সংস্থায় কর্মরত ছিলেন।


গত ২৯ মার্চ তাঁদের নিয়ে প্রথন শুনানি হয় আদালতে। কাতারে তাঁরা ভারতের হয়ে চরবৃত্তি করছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়। ধৃতদের পরিবারের দাবি, কোন মামলায়, কী ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে, কী কী অভিযোগ রয়েছে, তার কিছুই জানানো হয়নি তাঁদের। কাতার সরকার তো বটেই, ভারতের তরফেও কোনও রকম সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ তাঁদের। 


এ বছর ৬ এপ্রিল ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক বিষয়টি নিয়ে বিবৃতি দেয়। জানানো হয়, ধৃত আটজনকে সমস্ত রকমের আইনি সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তার পরই তাঁদের মৃত্যুদণ্ডের খবর সামনে এল। এখনও পর্যন্ত যে তথ্য মিলেছে, সেই অনুযায়ী, গত বছর ৩০ অগাস্ট কাতারের গুপ্তচর সংস্থা স্টেট সিকিওরিটি ব্যুরো ওই আটজনকে গ্রেফতার করে। ভারতীয় দূতাবাসের কাছে খবর পৌঁছয় সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়। ওই বছর ৩০ অক্টোবর ফোনে পরিবারের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি পান ধৃতরা। ৩ অক্টোবর ভারতীয় দূতাবাসের আধিকারিকরা দেখা করতে যাওয়ার অনুমতি পান। তার পর থেকে সপ্তাহে একবার বাড়িতে ফোন করার অনুমতি পান ধৃতরা। তাঁদের প্রাণরক্ষা করতে ভারত সরকারের আবেদন জানিয়েছেন পরিবার-পরিজনরা।