নয়া দিল্লি: ইজরায়েল (Israel)-গাজা (Gaza) যুদ্ধে সঙ্কটের মেঘ ক্রমশ যেন ঘনীভূত হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে গত ১০ দিনের যুদ্ধে গাজা ভূখণ্ডে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২ হাজার ৮০০ জন প্যালেস্তিনীয়র। আহত ১০ হাজার ছুঁইছুঁই। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কেও ৫৭ জন মারা গেছেন। আহতের সংখ্যা ১২০০। উল্টোদিকে, ইজরায়েলে মৃতের সংখ্যা ১৪০০। সাড়ে ৩ হাজার মানুষ কমবেশি আহত।
নির্মলেন্দু গুণ লিখেছিলেন, 'যুদ্ধ মানেই শত্রু শত্রু খেলা/ যুদ্ধ মানেই আমার প্রতি তোমার অবহেলা৷' যুদ্ধ মানেই তো দুপক্ষেরই ক্ষতি! প্রতিদিন নিরীহ মানুষ, সর্বোপরি শিশুদের মৃত্যু, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিয়ে চলেছে এক বর্বরতার দিকে। যুদ্ধক্ষত এলাকাগুলিতে শুধু বিধ্বস্ত দৃশ্য। যেদিকে দু'চোখ যায় শুধুই ভগ্নপ্রায়, ধুলোয় ঢাকা প্রান্তর। ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেহ, জঞ্জালের স্তূপ। গাজার পরিস্থিতি আরও কঠিন। পানীয় জল নেই। যা আছে তা লবণাক্ত জল। তেষ্টার মুখে সেই খেয়ে চলছে প্রাণ নিবারণের কাজ।
পানীয় জলের সন্ধান পেতে যত্রতত্র চলছে পাতকুয়ো খোঁজার কাজও। কিন্তু বর্তমানে সেই অবস্থাও করুণ। ড্রেনের জল, সমুদ্রের জল মিশে একাকার। সেই পরিস্থিতিতে অনেকেই প্লাস্টিকের পানীয় জল বোতল করে সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, "গাজায় জল ও বিদ্যুৎ ফুরিয়ে যাচ্ছে। গাজাকে শ্বাসরোধ করা হচ্ছে এবং মনে হচ্ছে বিশ্ব এখন তার মানবতা হারিয়ে ফেলেছে।"
গাজায় বসবাসকারী সাধারণ প্যালেস্তিনিয়দের প্রবল দারিদ্রের সঙ্গে লড়তে হয় প্রতিনিয়ত। একথা ঠিক যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের আর্থিক সাহায্য করে কিন্তু, অভিযোগ, অনুদানের টাকা গাজার দরিদ্র মানুষের নয়, ঢুকে যায় হামাসের তহবিলে। আর তা দিয়েই চলে ইজরায়েল বিরোধী কার্যকলাপের মহড়া। গাজার উত্তরাংশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘরছাড়া হতে হয়েছে কমপক্ষে সাড়ে ৪ লক্ষ নিরীহ মানুষকে। পরিসংখ্য়ান বলছে, রাষ্ট্রপুঞ্জ নিয়ন্ত্রিত স্কুলগুলিতে আশ্রয় নিয়েছেন ২ লক্ষ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ। ভূখণ্ড-বিবাদে আপাতত শান্তির জায়গা নেই ইজরায়েল কিম্বা প্যালেস্তাইন - কোথাও! ফের মানুষ ঘর ছাড়ছেন। কবে ফিরবেন, কেউ জানেন না।
আরও পড়ুন, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইজরায়েলে যেতে পারেন বাইডেন, গাজা দখল নিয়ে দিলেন কড়া বার্তাও
মাতৃভূমি দখলের যুদ্ধ না অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই? ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়া ইজরায়েল আর গাজার আকাশ দেখে এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন হাজার হাজার মানুষ। আর এই সবকিছুকে ছাপিয়ে যা বড় হয়ে উঠেছে, তা হল রক্ত, ছিন্নভিন্ন দেহ। ভূমধ্যসাগরের পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এখন শুধুই হাহাকার।