নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের পর প্রথম বড় দু'টি বিধানসভা নির্বাচনে ধাক্কা খেতে পারে বিজেপি। প্রায় সব বুথফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী, হরিয়ানায় বড় ধরনের পরাজয় হতে পারে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের দলের। এক দশক বাদে হরিয়ানায় ক্ষমতা দখল করতে পারে কংগ্রেস। একই ভাবে  জম্মু ও কাশ্মীরেও বিজেপি হারতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে একাধিক বুথফেরত সমীক্ষায়। উপত্যকায় ক্ষমতা দখল করতে পারে কংগ্রেস-জোট। আবার জম্মু ও কাশ্মীরের ফলাফল ত্রিশঙ্কু হতে পারে বলে কিছু বুথফেরত সমীক্ষায় মিলেছে ইঙ্গিত। (Haryana Assembly Elections Exit Polls)


হরিয়ানায় গত ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। কিন্তু এবার তাদের ক্ষমতায় ফেরা নিয়ে গোড়া থেকেই ধন্দ দেখা দেয়। বিশেষ করে দুশ্যন্ত চৌটালার জননায়ক জনতা পার্টির সঙ্গে জোট ভেঙে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত গেরুয়া শিবিরের বিপক্ষে যেতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এতে জাঠ ভোটের বড় অংশ হাতছাড়া হতে পারে বিজেপি-র, যা হরিয়ানার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ।  এবার হরিয়ানার জাঠ ভোট দুশ্যন্তের জননায়ক জনতা পার্টি এবং অভয় চৌটালার ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোক দলের মধ্যে ভাগ হয়ে যেতে পারে। (Haryana Exit Polls 2024)


আর তাতেই এবারের হরিয়ানা নির্বাচনে সবচেয়ে বড় গেম চেঞ্জার হিসেবে উঠে আসছে কংগ্রেস। কৃষক আন্দোলন এবং কুস্তিগীরদের অসন্তোষ কংগ্রেসকে এবার ডিভিডেন্ড দিতে চলেছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। বিনেশ ফোগাতের মতো প্রার্থী চয়নও বিজেপি-র থেকে এগিয়ে রাখছে কংগ্রেসকে। সেই সঙ্গে 'অগ্নিপথ প্রকল্প' নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মনে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তাকেও নিজেদের পক্ষে কাজে লাগাতে সফল হয়েছে কংগ্রেস। 


তাই কংগ্রেস নেত্রী কুমারী সেলজা বলেন, "হরিয়ানায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়তে চলেছি আমরা।" রাহুল গাঁধীর 'ভারত জোড়ো যাত্রা', বিজেপি-র বিরুদ্ধে অনাস্থা এবং কংগ্রেসের তৃণমূলস্তরের কর্মীদের পরিশ্রমই দলকে এতদূর এগিয়ে এনেছে বলে মত তাঁর। নির্বাচনে জয়ী হলে কাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেনি কংগ্রেস। তবে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন খোদ সেলজা। আবার ভূপিন্দর সিংহ হুডাকে নিয়েও আশাবাদী দলের একাংশ। ভূপিন্দরও জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। যদিও বুথফেরত সমীক্ষাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি। হরিয়ানায় বিজেপি-র বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নয়াব সিংহ সাইনি বলেন, "সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়বে বিজেপি। আমরা জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।" একই সুর ধরা পড়ে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অনিল ভিজের গলায়। তাঁর কথায়, "আগেও বুথফেরত সমীক্ষা হয়েছে, আগামীতেও হবে। বিজেপি হরিয়ানায় জিতে সরককার গঠন করবে।"


হরিয়ানায় তৃতীয় বারের জন্য় ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া বিজেপি। কিন্তু বুথফেরত সমীক্ষায় গেরুয়া শিবির বড় ধাক্কা খেতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। 
C ভোটারের সমীক্ষা অনুযায়ী, ৯০ আসন বিশিষ্ট হরিয়ানা হারাতে পারে বিজেপি। বড় জয় পেতে পারে কংগ্রেস। কংগ্রেস পেতে পারে ৫০ থেকে ৫৮টি আসন। বিজেপি-র আসন সংখ্যা কমে হতে পারে মাত্র ২০ থেকে ২৮টি। অন্য় দলগুলির ঝুলিতে যেতে পারে ১০ থেকে ১৬টি আসন।


দৈনিক ভাস্করের সমীক্ষা অনুযায়ীও হরিয়ানায় বিজেপি-কে ক্ষমতাচ্য়ূত করে ১০ বছর বাদে ক্ষমতায় আসতে পারে কংগ্রেস। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, কংগ্রেস পেতে পারে ৪৪ থেকে ৫৪টি আসন, বিজেপি পেতে পারে ১৫ থেকে ২৯টি আসন, INLD জোট পেতে পারে ১ থেকে ৫টি আসন। অন্য়ান্য়দের ঝুলিতে ৬ থেকে ৯টি আসন যেতে পারে।


ধ্রুব রিসার্চের এক্সটি পোলেও স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে যে, হরিয়ানায় পরাজয় হতে পারে বিজেপি-র। কংগ্রেস পেতে পারে ৫৭টি আসন। বিজেপি মাত্র ২৭টি। INLD জোটের ঝুলি শূন্য় থাকতে পারে। অন্য়ান্য়দের ঝুলিতে যেতে পারে ৬টি আসন।


ম্য়াট্রিজের সমীক্ষাও হরিয়ানায় বিজেপি-র পরাজয়ের দিকেই ইঙ্গিত করছে। তাদের এক্সটি পোল অনুযায়ী, কংগ্রেস পেতে পারে ৫৫ থেকে ৬২টি আসন। বিজেপি ১৮ থেকে ২৪টি আসন, INLD জোট পেতে পারে ৩ থেকে ৬টি আসন, অন্য়ান্য়র ঝুলিতে ২ থেকে ৮টি আসন যেতে পারে।


পিপলস পালসের বুথফেরত সমীক্ষাও ইঙ্গিত করছে হরিয়ানা বিজেপি-র হাতছাড়া হতে পারে বলে। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, কংগ্রেস পেতে পারে ৪৯ থেকে ৬১টি আসন। বিজেপি পেতে পারে মাত্র ২০ থেকে ৩২টি আসন, INLD জোট ২ থেকে ৩টি আসন পেতে পারে, ৪ থেকে ৫টি আসন অন্য়ান্যদের ঝুলিতে যেতে পারে।


JIST-TIF রিসার্চের এক্সটি পোলও একইভাবে হরিয়ানায় কংগ্রেসের বড় জয়ের দিকেই ইঙ্গিত করছে। তারা পেতে পারে ৪৫ থেকে ৫৩টি আসন।
বিজেপি পেতে পারে ২৯ থেকে ৩৭টি আসন। INLD জোট ০ থেকে সর্বোচ্চ ২টি আসন পেতে পারে। অন্য়ান্য়ের ঝুলিতে যেতে পারে ৪ থেকে ৬টি আসন।  আগামী ৮ অক্টোবর, অর্থাৎ মঙ্গলবার জম্মু কাশ্মীরের সঙ্গে হরিয়ানার ফল ঘোষণা হবে। সেদিনই বোঝা যাবে হরিয়ানার ভোটাররা কাকে জেতালেন, কাকে হারালেন।