হাথরস: হাথরসের সৎসঙ্গে স্বঘোষিত 'গডম্য়ানে'র পদধূলি নিতে গিয়ে পায়ের নীচে পিষে প্রাণ গেল ১২১ জনের। এত জনের মৃত্যুর দায় কার? উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারকে নিশানা করেছে বিরোধীরা। অখিলেশ যাদবের সঙ্গে ধর্মগুরুর ছবি দেখিয়ে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। 


স্বঘোষিত ধর্মগুরুর 'সৎসঙ্গে' শেষ ১২৩ জন। স্বঘোষিত 'গডম্য়ানে'র 'চরণধূলি' নিতে গিয়ে বিপত্তি। হাথরসের মুঘলগড়ি ফুলরাই গ্রামে আয়োজন করা হয়েছিল সৎসঙ্গের। উপস্থিত ছিলেন 'ভোলে বাবা'। এক স্বঘোষিত ধর্মগুরু। গডম্যান। যাঁর ভক্ত ছড়িয়ে উত্তরপ্রদেশ থেকে মধ্য়প্রদেশ-রাজস্থান-হরিয়ানা অবধি। আর সেই সৎসঙ্গই কেড়ে নিল শতাধিক প্রাণ। স্বঘোষিত বাবা নিরাপদে অনুষ্ঠানস্থল থেকে চলে গেলেন, আর পেছনে পড়ে রইলেন ভক্তরা। একে অপরের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে শেষ হয়ে গেলেন সেখানেই।


মৃত্যুর পর নরেন্দ্র মোদি থেকে যোগী আদিত্যনাথ লোকসভার বিরোধী দলনেতা থেকে উত্তরপ্রদেশের প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টির প্রধান, সবাই দুঃখপ্রকাশ করেছেন। মৃতদের পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। যোগী প্রশাসন তড়িঘড়ি আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করে দিয়েছেন। তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। 


মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে পদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন-হাসপাতালে যাচ্ছেন। কিন্তু, যে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তো শুরুতে এগুলোই করা হয়...তারপর কী হয়? যে স্বঘোষিত ধর্মগুরু 'ভোলে বাবা'র প্রবচন শুনতে হাজির হয়েছিলেন ভক্তরা, তিনি দায় নেবেন? কীভাবে অনুমতির চেয়েও বেশি মানুষ হাজির হল, যোগী-প্রশাসন কী জবাব দেবে? আড়াই লক্ষেরও বেশি ভক্ত-সমাগম দেখেও প্রশাসন কী ব্য়বস্থা নিয়েছিল? ঘটনাস্থলে আগাম সতর্কতা হিসাবে পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স ছিল?পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল? না কি শুধুই 'ভোলে বাবা'র নিরাপত্তা বাহিনীর ভরসায় বসে ছিল পুলিশ বাহিনী?


উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির সাংসদ ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বলেন, 'এর জন্য বিজেপি সরকার দায়ী, যারা বড় বড় দাবি করে। বিশ্ব অর্থনীতিতে দেশ পঞ্চম, এবার তৃতীয় হতে চলেছে। অর্থব্যবস্থার অর্থ আপনি জরুরি সময়ে মানুষের চিকিৎসা করাতে পারবেন না? কোনও এমার্জেন্সি হলে আপনি মানুষকে কোনও সুবিধা দিতে পারবেন না? খালি হাসপাতালে নিয়ে যাবেন, যেখানে ওষুধ থাকবে না, কোনও ব্যবস্থা থাকবে না, অক্সিজেন থাকবে না। এ কেমন অর্থব্যবস্থা?' 


অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, কিছু মানুষের এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনা নিয়েও রাজনীতি করার প্রবৃত্তি রয়েছে। কিছু মানুষের প্রবণতা রয়েছে, চুরি করবে, আবার বড় বড় কথাও বলবে। সবাই জানে ওই ধর্মগুরুর সঙ্গে কার ছবি রয়েছে, কোন রাজনৈতিক দলের যোগ রয়েছে। সবাই জানে বিগত দিনে যে সমস্ত র‍্যালি হয়েছে, পদপিষ্টের মতো ঘটনা ঘটেছে, তার নেপথ্যে কে ছিল? এটা সবার জানা প্রয়োজন।


পাশাপাশি, রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা ও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, 'এর জন্য কোনও আইন নেই। এই যে এত বড় করে সৎসঙ্গের আয়োজন করা হয়েছে, তার জন্য কতটা জায়গা লাগবে, কোন জায়গায় হবে, ঢোকার রাস্তা, আশেপাশে কোন কোন হাসপাতাল আছে, সব দেখা দরকার। এই যে এত লোক কিছু না জেনেই সেখানে যাচ্ছে। এত বড় বিপর্যয় ঘটে গেল, ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এর জন্য আইন তৈরি করুন। এর ফলে যারা সৎ লোক তারা আসবে। আর অসৎ লোকেরা এভাবে টাকা নিয়ে আশ্রম বানিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লুঠ করছে তাহলে এটা বন্ধ হবে। এই নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দেওয়া উচিত।


সব মিলিয়ে হাথরসকাণ্ড নিয়ে রাজনীতির আঙিনা সরগরম। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে