India-Pakistan Conflict: আঘাত-প্রত্যাঘাতেই ইতি, নাকি জল গড়াবে অনেক দূর? ভারত বনাম পাকিস্তান, কার পাশে কোন দেশ
India-Pakistan Tension: বিশ্বের তাবড় শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি কার পক্ষ নেবে, সেই নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে বিচার-বিশ্লেষণ।

নয়াদিল্লি: পহেলগাঁও-নৃশংসতার বদলা নিতে ভারত যে পিছপা হবে না, সেই নিয়ে সন্দেহের অবকাশ ছিল না। কিন্তু এত তাড়ি ভারত ও পাকিস্তান যে সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হবে, কল্পনা করতে পারেননি অনেকেই। বিশেষ করে এই মুহূর্তে যখন পৃথিবীর দুই প্রান্তে দু'টি যুদ্ধ চলছে, ১) রাশিয়া বনাম ইউক্রেন, ২) ইজরায়েল বনাম প্যালেস্তাইনের হামাস। কিন্তু পৃথিবীর তাবড় দেশের উৎকণ্ঠা বাড়িয়েই এবার আঘাত-প্রত্যাঘাতে জড়িয়ে পড়ল ভারত ও পাকিস্তান। পহেলগাঁও হামলার জবাবে ভারত পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দিয়ে এসেছিল। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় পাকিস্তান সরাসরি ভারতের নগরজীবনের উপর হামলার চেষ্টা চালাল দু'-দু'বার। পাকিস্তানের সেই চেষ্টা যদিও সফল হয়নি, উল্টে তাদের লাহৌর, রাওয়ালপিণ্ডি দুরমুশ করে দিয়েছে ভারত। কিন্তু এই ঘটনাক্রমকে ঘিরেই এখন পারদ চড়ছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির। আর এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের তাবড় শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি কার পক্ষ নেবে, সেই নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে বিচার-বিশ্লেষণ। (India-Pakistan Conflict)
আমেরিকা
পহেলগাঁওয়ের জবাবে ভারত পাকিস্তানে স্ট্রাইক চালানোর পরই মুখ খুলেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুই দেশকে সংযম বজায় রাখার বার্তা দিলেও, ভারত যে 'ঢিলের জবাবে পাটকেল ছুড়েছে', তা স্পষ্ট জানিয়ে দেন ট্রাম্প। এমনকি বৃহস্পতিবার রাতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আঘাত, পাল্টা আঘাত চলাকালীনই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে কথা বলেন আমেরিকার বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও। নিরীহ নাগরিকদের প্রাণহানির জন্য দুঃখপ্রকাশের পাশাপাশি, শেহবাজকে স্পষ্ট ভাষায় রুবিও জানিয়ে দেন যে, সন্ত্রাসে কোনও রকম সহযোগিতা জোগানো যাবে না। কোনও রকম মদত থাকলে, অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে বলে জানিয়ে দেন। (India-Pakistan Tension)
আমেরিকার এই অবস্থান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ পাকিস্তান যে সন্ত্রাসে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে মদত জোগায়, তা বহু যুগ ধরেই আন্তর্জাতিক মহলের কাছে তুলে ধরে আসছে ভারত। এমনকি বুধ-বৃহস্পতির রাতে পাকিস্তান ভারতের আকাশে হানা দেওয়ার পরও, এদিন বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি সরাসরি ৯/১১ হামলার প্রসঙ্গ টানেন। জানান, ওই হামলার মাথা ওসামা বিন লাদেনকে কিন্তু পাকিস্তানে গিয়েই নিকেশ করতে হয়েছিল। তাই শেহবাজের সঙ্গে মার্কোর কথোপকথন ভারতের দাবিতেই সিলমোহর পড়ল, পাকিস্তান যে সন্ত্রাসে মদত জোগায়, তা আমেরিকাও মানছে বলে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। তাই সন্ত্রাসের প্রশ্নে পাকিস্তানকে নিয়ে ভারত এবং আমেরিকার সুর মিলে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ব্রিটেন
ভারত এবং পাকিস্তানের সংঘাত নিয়য়ে এই মুহূর্তে নিরপেক্ষ অবস্থান নিচ্ছে ব্রিটেন। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক ভারতর প্রতি সমর্থন জানালেও, এই মুহূর্তে ক্ষমতায় নেই। দেশের প্রধানমন্ত্রী কির স্টার্মারের সরকারের বাণিজ্য সচিব জোনাথন রেনল্ডস জানিয়েছেন, ভারত এবং পাকিস্তান, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় দুই দেশের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা দুই পক্ষকেই সমর্থনে রাজি, যদি আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত থেকে বিরত হয় ভারত ও পাকিস্তান। উল্লেখ্য, ব্রিটেনের হাতেই দু'টুকরো হয় ভারত। যাবতীয় সমস্যার সূচনা সেখান থেকেই।
রাশিয়া
রাশিয়া নিজে এখনও ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ লড়ছে। তাদের বিদেশমন্ত্রী সেরগেই লাভরভ ভারত ও পাকিস্তানকে সংযত থাকতে বলেছেন। বরং সংঘাত যাতে আর না পারে, সেদিকে পদক্ষেপ করতে বলেন তিনি। জানান, রাশিয়া সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা করে। গোটা বিশ্বকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে য়োগ দিতে আহ্বান জানান। তবে রাশিয়া ভারতের বিপদ-আপদের সঙ্গে। স্বাধীনতার সময় থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক মজবুত। যে S-400 প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাকিস্তানের হানা ঠেকিয়েছে ভারত, তা রাশিয়ার থেকেই কেনা।
চিন
লাদাখ এবং অরুণাচলপ্রদেশে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে সংঘাত রয়েছে চিনের। তাই শত্রুর শত্রু বন্ধু, এই নীতি নিয়ে বহু বছর ধরেই পাকিস্তানকে তোল্লাই দিয়ে আসছে তারা। যতবার রাষ্ট্রপুঞ্জে সন্ত্রাসের বাড়বাড়ন্তে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছে ভারত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভেটো প্রয়োগ করেছে চিন। পাকিস্তানকে তারা বন্ধুদেশ বলে উল্লেখ করেছে। পহেলগাঁও হামলা নিয়ে পাকিস্তান যখন তদন্তের দাবি জানায়, এবার তাতেও সমর্থন জানায় চিন। ভারত স্ট্রাইক চালানোর পর যদিও দুই দেশকেই শুভবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে সংযত হতে বলে তারা। কিন্তু জল যদি আরও গড়ায়, সেক্ষেত্রে তাদের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
ফ্রান্স
ভারত পাকিস্তানে স্ট্রাইক চালানোর পর ফ্রান্সের বিদেশমন্ত্রী জঁ-নোয়ের ব্যারত জানান, সন্ত্রাসের হাত থেকে আত্মরক্ষার পূর্ণ অধিকার আছে ভারতের। তবে নাগরিকদের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, তার জন্য সংঘাত এড়ানোর পরামর্শ দেন। তবে ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। পাকিস্তান ও চিনের মোকাবিলা করতে ফ্রান্সের সংস্থা থেকেই রাফাল যুদ্ধবিমান কেনে ভারত।
ইজরায়েল
ভারত পাকিস্তানে স্ট্রাইক চালানোর পরই সমর্থনে এগিয়ে আসে ইজরায়েল। ভারতে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত রুবেন আজহার জানান, ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে ইজরায়েল। নিরীহ মানুষকে খুন করে যে লুকনো যাবে না, তা জঙ্গিদের বোঝা উচিত বলে জানান।
তুরস্ক
জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে এর আগে ভারতের অস্বস্তি বাড়িয়েছিল রিচেপ তইপ এর্দোয়ান সরকার। ভারত স্ট্রাইক চালানোর পর তুরস্কের রাষ্ট্রদূত পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দারের সঙ্গে দেখা করেন। জানান, ভারত পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। সোস্যাল মিডিয়ায় একথা জানান পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফই।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহি
ভারত এবং পাকিস্তানকে সংযত থাকার পরামর্শ দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির শেখ আব্দুল্লা বিন জায়েদ আল নাহেয়ান। আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাকতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার কথা বলেছেন তিনি। আগেও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি মধ্যস্থতার চেষ্টা করে।
কাতার
ভারত স্ট্রাইক চালানোর পর রাতারের বিদেশমন্ত্রক জানায়, ভারত এবং পাকিস্তানের সংঘাত নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। প্রতিবেশী হওয়ার দরুণ কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান বের করতে হবে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার কথাও বলা হয়।
সৌদি আরব
এই মুহূর্তে ভারতে রয়েছেন সৌদির বিদেশমন্ত্রী আদেল আল-জুবের। এদিন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। জয়শঙ্কর জাননা, সন্ত্রাসদমন নিয়ে কথা হয়েছে তাঁদের মধ্য়ে।
রাষ্ট্রপুঞ্জ
রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুটারেস জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে আর একটি সামরিক সংঘাত সহ্য করার মতো অবস্থায় নেই আন্তর্জাতিক মহল। বিশএষ করে দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে তো একেবারেই নয়।






















