BLOG : ১৩ এপ্রিল কোনওদিন ভুলবে না দেশ। ভুলবে না পাঞ্জাব। একশো তিন বছর আগের ওই দিনে বছর পঞ্চান্নর ব্রিটিশ আর্মির ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজিনাল্ড ডায়ারের নির্মম আদেশ ছিল নির্বিচারে গুলি চালনার। পঞ্চাশ গোর্খা ও বালুচ রাইফেলম্যান তার নির্দেশে আচমকা গুলি চালাতে শুরু করে নিরস্ত্র, নিরীহ ভারতীয়দের ওপরে। অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগের এক বেষ্টনীতে হাজির হয়েছিলেন প্রায় পনেরো থেকে কুড়ি হাজার ভারতীয়। স্বর্ণমন্দির থেকে ঢিল ছোড়়া দূরত্বে। নির্বিচারে গুলি থামে তখনই যখন গুলি চালনার মত রসদ ছিল না আর রাইফেলম্যানদের কাছে। ততক্ষণে ১৬৫০ রাউন্ড গুলি ফায়ার করা হয়ে গিয়েছে। সরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা কম করে ৩৭৯। আহত ১২০০। তবে অনেকেই মনে করেন, মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি। হাজারের মতো। সলমন রুশদির মিডনাইটস চিলড্রেন উপন্যাসে সেলিমের স্মৃতিচারণায় শোনা গিয়েছিল জেনারেল ডায়ার তার সেনাদের উদ্দেশে বলছে, “ভালো গুলি চালিয়েছ”। তার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা হয়েছিল। কর্তব্য পালন করা হয়েছিল। জেনারেল ডায়ার আরও বলেছিল, “আমরা মজার কাজ করেছি একটা।”


সেদিনটা ছিল বৈশাখী। বসন্তের কৃষি উৎসবের পয়লা দিন। শহর ও লাগোয়া এলাকা থেকে মানুষ জড়ো হচ্ছিল স্বর্ণ মন্দির ও লাগোয়া এলাকায়। তবে  দিনগুলিও স্বস্তির ছিল না। কর চাপানো হয়েছিল, অনিশ্চয়তা ও হিংসায় ভারাক্রান্ত ছিল সময়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হাজার হাজার দেশবাসীর প্রাণ গেলেও, যুদ্ধশেষের পুরস্কার হিসেবে মিলেছিল বাড়তি অত্যাচার। সত্যই, ১৯১৮ সালের মাঝের দিকে মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইন ভারতীয় ফ্রাঞ্চাইজি স্বল্পই বৃদ্ধি পেয়েছিল। এবং একইভাবে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক স্তরে ক্ষমতা হস্তান্তরও হয়েছিল স্বল্প পরিসরে। দেশীয় উদারপন্থী দিক থেকে দেখতে গেলে এই সংস্কারগুলি ছিল অতিশয় ক্ষুদ্র এবং তাও এসেছিল অনেকটা দেরিতে।


দেশের জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে বৈপ্লবিক মনোভাবাপন্নরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে  সরব হয়েছিলেন আরও ছাড়ের দাবিতে। ইংরেজরা ভেবে নিয়েছিল তাদের শব্দ স্বর্ণখচিত, তাদের বিশ্বাস ছিল, তাদের প্রত্য়েকটি ধারণাই স্বচ্ছতার বশবর্তী। তবে ভারতীয়রা তাদের এই অযৌক্তিক ধ্যানধারণাকে গ্রহণ করতে রাজি ছিল না বলেই মনে হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, ব্রিটিশদের আপাত সহযোগী সখ্যর মুখোশ খুলতে বেশিদিন লাগেনি। তা ছিল অলীক কল্পনা মাত্র।


বৈপ্লবিক কার্যকলাপ সম্পর্কে তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করেছিল ইংরেজ শাসক। নেতৃত্বে জাস্টিস রাওলাট। কমিটির প্রস্তাব ছিল নাগরিক স্বতন্ত্রতাকে বিচ্ছিন্ন করার, ক্ষুণ্ণ করার। সেই মোতাবেক দ্রুত অনুসৃত হয়েছিল দমনমূলক আইন। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করতে অভিযুক্তদের আগাম আটক করে রাখার নীতি (প্রিভেনটিভ ডিটেনশন) নিয়েছিল ব্রিটিশ।ঘটনার জের প্রতিফলিত হয়েছিল ১৯১৯-এর লাহোরের এক সংবাদপত্রে – নো দলিল, নো ওকিল, নো অ্যাপিল (“no dalil, no vakeel, no appeal”)।


বিশেষ দ্রষ্টব্য - উপরিউক্ত লেখাটির পরিসংখ্যান, দাবি ও  মতামত লেখকের নিজস্ব। এবিপি লাইভের সম্পাদকীয় কোনওরকম প্রভাব এতে নেই। লেখাটির বিষয়ে এবিপি কোনওরকম মত পোষণ করে না।