ব্রাসিলিয়া: প্রতি বছরই হাজার হাজার মানুষ দেশ ছাড়েন। গত কয়েক বছর দেশছাড়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। সেই আবহেই এবার বেনজির পরিস্থিতি ব্রাজিলের বিমান বন্দরে। ভারত, নেপাল এবং ভিয়েতনামের কয়েকশো মানুষ সাও পাওলো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে রয়েছেন গত কয়েক দিন ধরে। কর্তৃপক্ষের থেকে বাধা পেয়ে দেশে ফিরে আসা তো দূর. বরং বিমানবন্দরের মেঝেতে শুয়েই দিন কাটছে তাঁদের। জুটছে না জল এবং খাবারও। (Indian Migrants in Brazil)


ভারত-সহ এশিয়ার দেশগুলি থেকে আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডার মতো দেশে বেআইনি অভিবাসীর সংখ্যা লাগাতার বেড়েই চলেছে। নজরদারি এড়িয়ে কেউ কেউ ঢুকে পড়তে সক্ষম হন, কারও কারও প্রাণ চলে যায় দুর্গম যাত্রাপথেই। সেনার হাতে আটক হয়ে দুর্দশার শেষও থাকে না। সেই ঘটনায় এবার নয়া সংযোজন। ভারত, নেপাল এবং ভিয়েতনাম থেকে কমপক্ষে ৬৬৬ জন সেখানকার বিমানবন্দরে আশ্রয় নিয়েছেন। (Indian Immigrants)


সংবাদ সংস্থা রয়টার্স বিষয়টি সামনে এনেছে। ব্রাজিলের পাবলিক ডিফেন্ডার্স অফিস সেই নিয়ে মুখ খুলেছে। এমনকি আশ্রিত মানুষজনের মধ্যে ৩৯ বছর বয়সি এক যুবক অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় থেকে মারাও গিয়েছেন বলে খবর। ঘানা থেকে ওই যুবক ব্রাজিলে ঢোকার চেষ্টা করেন। তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায়নি এখনও পর্যন্ত। বিমানবন্দরে আটক থআকা অবস্থায় মারা গিয়েছেন, না হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে, তা-ও অস্পষ্ট। 


জানা গিয়েছে, কানাডা এবং আমেরিকায় বেআইনি ভাবে ঢুকে পড়তে হাজার হাজার মানুষ রওনা দেন। লক্ষ্যে পৌঁছতে ব্রাজিলকে সাময়িক আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করেন তাঁরা। এবারও একই দৃশ্য চোখে পড়ে। কয়েকশো বেআইনি অভিবাসী দেখে বিমানবন্দরে আটক করা হয়। বিমানবন্দরের একটি জায়গায় সকলকে রাখা হয়েছে। সেখানে না আছে, জল, না আছে খাবার। স্নানও হয়নি কারও। প্রচণ্ড ঠান্ডায় চাদর-কম্বলের জোগানও নেই। সেই অবস্থাতেই শিশু, মহিলা-সহ শত শত মানুষ বসে রয়েছেন গত কয়েক সপ্তাহ ধরে।


এত সংখ্যক মানুষকে এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আটকে রাখা নিয়ে সরব হয়েছে ব্রাজিলের পাবলিক ডিফেন্ডার্স অফিস, যারা অভিবাসীদের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে। তারা জানিয়েছে, অবিলম্বে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া প্রয়োজন।  মানবিক কারণে ব্রাজিলে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার আইন রয়েছে। কাউকে নিজের দেশে ফিরে যেতে বাধ্যও করা হয় না। এক্ষেত্রে কেন সেই আইন মানা হচ্ছে না, প্রশ্ন উঠেছে। 


যদিও ব্রাজিল সরকার জানিয়েছে, ওই অভিবাসীদের কারও কাচে ভিসা ছিল না। আটক হওয়া কারও কাছে তা ছিল না। সরাসরি গন্তব্যে রওনা দিলে, বা নিজের দেশে ফিরে গেলে আটক করা  হতো না কাউকে। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি। দেশের সরকার জানিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে বেআইনি অভিবাসীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এশিয়া থেকে দলে দলে মানুষ জন কানাডা, আমেরিকা যেতে তাদের দেশকে ব্যবহার করছে।


জানা গিয়েছে, বেআইনি অভিবাসীরা ব্রাজিলে ঢুকে প্রথমে শরণার্থী হতে চান। নিজের দেশে অত্যাচারের শিকার, বিপদ রয়েছে বলে জানান। কিন্তু আশ্রয় পাওয়ার পর ক্রমশ উত্তরের দিকে রওনা দেন তাঁরা, যাতে আমেরিকা, কানাডায় যাওয়া যায়। তাই ভিসা ছাড়া ঢুকলে কাউকে ব্রাজিলে থাকতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে ব্রাজিল সরকার। এমনিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী কনভেনশনের সদস্য ব্রাজিল। শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার পক্ষেই তারা। সেই অবস্থান থেকে ব্রাজিল সরছে কি না, উঠছে প্রশ্ন।  কারও কারও মতে, এই মুহূর্তে বিমানবন্দরে আটকে রয়েছেন যাঁরা, তাঁদের ক্ষেত্রেই আপাতত প্রযোজ্য নয়া নিয়ম।