হায়দরাবাদ: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে জারি হয়েছিল দেশজুড়ে লকডাউন। সেই সময় ছেলেকে স্কুটিতে চাপিয়ে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন রাজিয়া বেগম নামে এক মহিলা। এ জন্য ১৪০০ কিমি পথ পাড়ি দিয়েছিলেন স্কুটি চালিয়ে। কিন্তু তাঁর সেই ছেলে আবার আটকে পড়েছেন। এবার ইউক্রেনে।  আসলে রাজিয়ার ছেসে ইউক্রেনের সুমির একটি মেডিক্যাল কলেজে এমবিসিএসের প্রথম বর্ষের ছাত্র। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে অন্যান্য অনেক ভারতীয় পড়ুয়ার মতো রাজিয়ার ছেলেও সেখানে আটকে পড়েছেন। সেখান থেকে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন রাজিয়ার ছেলে। 


রাজিয়ার ছেলে বর্তমানে রাশিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন সুমিতে রয়েছেন। সেখানে তিনি সুমি স্টেট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে এমবিবিএস পড়ুয়া। তাঁর নাম নিজামুদ্দিন। রাশিয়ার বোমার হানা থেকে বাঁচতে তিনি সহপাঠীদের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন ব্যাঙ্কারে। ওই পরিস্থিতিতেও তিনি মাকে ফোন না করে উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।


রাজিয়া জানিয়েছেন, ছেলের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। ছেলেই তাঁকে ফোন করেছিলেন। মাকে ফোনে আমন বলেছেন, সেখানে তিনি ঠিক আছেন। উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই।  উল্লেখ্য, ২০২০-তে লকডাউনের সময় ছেলেকে স্কুটিতে বসিয়ে রাজিয়ার পাড়ি দেওয়ার ছবি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। 


রাজিয়া ২০২০-র ৬ এপ্রিল পুলিশের অনুমতি নিয়ে একাই স্কুটি চালিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর জেলার উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। আর টানা স্কুটি চালিয়ে পরদিন দুপুরে নেল্লোরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ছেলেকে নিয়ে তেলঙ্গানায় ফিরে এসেছিলেন রাজিয়া। এজন্য তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছিল ১৪০০ কিলোমিটার। 


রাজিয়া জানিয়েছিলেন, এই যাত্রা তাঁর কাছে আদৌ সহজ ছিল না। বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। তিনি বলেছিলেন, লকডাউনের পরিস্থিতিতে স্কুটি নিয়ে একজন মহিলার এতটা দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া একেবারেই সহজ ছিল না। কিন্তু ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার জেদই তাঁর মনে সাহস জুগিয়েছিল। আর সেই সাহসে ভর করে ছেলেকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছিলেন তিনি। 


রাজিয়ার ছেলে নিজামুদ্দিন এমবিবিএস প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য কোচিং নিচ্ছিলেন। ২০২০-র ১২ মার্চ নিজের বন্ধুকে নেল্লোর ছাড়তে গিয়েছিলেন। তারপর সেখানে কিছুদিন থাকার পর লকডাউন ঘোষিত হয়েছিল। রাজিয়ার স্বামী মারা গিয়েছেন কয়েক বছর আগেই। নিজামুদ্দিন ছাড়াও তাঁর আরও এক সন্তান রয়েছে। কিন্তু পুলিশের ভয়ে ছেলেকে না পাঠিয়ে নিজেই পাড়ি দিয়েছিলেন রাজিয়া।