লখনৌ : আগামীকাল পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশ। উত্তরপ্রদেশ (Uttar Pradesh), পাঞ্জাব (Punjab), গোয়া, মণিপুর ও উত্তরাখণ্ডে। তার আগে সরগরম জাতীয় রাজনৈতিক মহল। কারণ, এই রাজ্যগুলিতে ভোটের ফলাফলের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে আগামী দিনের রাজনৈতিক সমীকরণ। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে। এখানে এবার সমাজবাদী পার্টির সমর্থনে প্রচারেও নেমেছেন তৃণমূলনেত্র্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজেই, এই রাজ্যের ফলাফলের উপর আগামী দিনে সপা-তৃণমূলের রাজনৈতিক সমীকরণ যে অনেকটাই নির্ভর করবে, তা বলাইবাহুল্য। এমনই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলও।
গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীতে (Mamata in Varanasi) সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের হয়ে সভা করেন মমতা। অভিনেত্রী তথা দলের সাংসদ জয়া বচ্চনও ছিলেন ওই মঞ্চে। সেখান থেকে বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ করেন মমতা। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগীকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, "সাধুদের অপমান করেছেন যোগী আদিত্যনাথ। যোগী নিজেকে সাধু বলেন, কিন্তু যোগী সাধু নন। কেউ নিজেকে সাধু বললেই সাধু হয়ে যান না। আমাকে ধর্ম শেখাতে আসবেন না। জয় শ্রীরাম নয়, স্লোগানটা হল জয় সিয়ারাম।"
বাংলায় ১০৮ কেন্দ্রের পুরসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর গত বুধবারই উত্তরপ্রদেশের উদ্দেশে রওনা দেন মমতা। কিন্তু সেখানে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকেরা। গঙ্গার ঘাটে যাওয়ার পথে মমতাকে কালো পতাকা দেখানো হয়। জয় শ্রীরাম স্লোগান ওঠে। পাল্টা জয় হিন্দ স্লোগান দেন তৃণমূল নেত্রী।
সভামঞ্চে সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেন মমতা। বলেন, "বারাণসীতে বিজেপি আমার গাড়ি আটকে লাঠি চালাল। আমাকে ফিরে যেতে বলে। কালো কাপড় ছোড়ে। আমি কাউকে ভয় পাই না, তাই রুখে দাঁড়াই। আমার উপর আগে এত অত্যাচার হয়েছে, তা-ও কোনওদিন মাথা নোয়াইনি। আমাকে দেখে গালিগালাজ করছিল। গাড়ি থেকে নেমে চ্যালেঞ্জ করি আমি। বলি, গালিগালাজ করার জন্য ধন্যবাদ, বোঝাই যাচ্ছে বিজেপি হারছে।"
এপ্রসঙ্গে সরব হন অখিলেশ যাদবও। বারাণসীতে ভোটপ্রচারের মঞ্চ থেকে অখিলেশ (Akhilesh Yadav) বলেন, "বারাণসীতে ঐতিহাসিক জনসভা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ।" গত বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ক্ষমতা দখলের স্বপ্নভঙ্গকে খোঁচা দিয়ে অখিলেশ বলেছেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছেন, হারের কথা মনে পড়েছে বিজেপির। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই হারের ভয় পাচ্ছে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশ থেকে বিজেপি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে। মানুষ বিজেপিকে মাফ করবে না, সাফ করে দেবে। এবারের নির্বাচনে আসল লড়াই করছে সাধারণ মানুষ।"
এদিকে এর আগে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দুই দিনের জন্য উত্তরপ্রদেশ সফরে গিয়েছিলেন মমতা। উল্লেখ্য, এবারের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে লড়েনি তৃণমূল কংগ্রেস। তবে আগে মমতা ঘোষণা করেছিলেন, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে এখানে কয়েকটি আসনে লড়বে তৃণমূল। ললিতেশপতি ত্রিপাঠী কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর এই রাজ্যে শক্তিশালী ইউনিট গড়ার চেষ্টা করছে তৃণমূল।
এদিকে কার দখলে থাকতে চলেছে লখনউয়ের তখত? এনিয়ে জল্পনার মধ্যেই সি ভোটারের বুথ ফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরে এবারও দেশের সবচেয়ে বড় বিধানসভায় ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে বিজেপি। সমীক্ষক সংস্থা সি ভোটারের Exit poll-এ ইঙ্গিত, উত্তরপ্রদেশের ৪০৩টি আসনের মধ্যে ২২৮ থেকে ২৪৪টি আসনে জিতে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে বিজেপি ও তার সহযোগীরা। অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি ও জয়ন্ত চৌধুরীর RLD জোট জিততে পারে ১৩২ থেকে ১৪৮টি আসনে। ১৩ থেকে ২১টি আসনে জিততে পারে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি। প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের ঝুলিতে যেতে পারে ৪ থেকে ৮টি আসন। ২ থেকে ৬টি আসন যেতে পারে অন্যদের ঝুলিতে।
সি ভোটারের Exit poll-এ ইঙ্গিত, উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ও তার সহযোগীরা পেতে পারে ৪১ শতাংশ ভোট। ৩৪ শতাংশ ভোট যেতে পারে সমাজবাদী পার্টি- RLD জোটের পক্ষে।মায়াবতীর বিএসপি পেতে পারে ১৭ শতাংশ ভোট।৫ শতাংশ ভোট যেতে পারে কংগ্রেসের ঝুলিতে।এবং অন্যরা প্রায় ৩ শতাংশ ভোট পেতে পারে উত্তরপ্রদেশে।
তবে চূড়ান্ত ফল জানা যাবে কাল, ১০ মার্চ।