নয়াদিল্লি: মহারাষ্ট্রের প্রাক্তনব মন্ত্রী, প্রভাবশালী রাজীনীতিক বাবা সিদ্দিকির খুনের ঘটনায় তোলপাড় দেশের অন্দরে। অভিনেতা সলমন খানেরও প্রাণ সংশয় দেখা দিয়েছে। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে তাঁর বাড়ির বাইরে। আর সেই আবহেই চাঞ্চল্যকর দাবি করল কানাডা পুলিশ। তাদের দাবি, বিশ্নোই গ্যাং আসলে ভারত সরকারের মদতপুষ্ট। দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে, বিশেষ করে খালিস্তানপন্থীদের নিকেশ করে বিশ্নোই গ্যাং-কে ব্যবহার করে ভারত। (India-Canada Relations)


রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের কমিশনার মাইক ডুহিনি, তাঁর ডেপুটি ব্রিজিত গওভিন এই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। খালিস্তানপন্থী হরদীপ নিজ্জর খুনে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার হাত রয়েছে বলে আগেই দাবি করেছে কানাডা। তাদের দেশে ভারতীয় এজেন্টরা রক্তপাত, নাশকতা ঘটাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এবার বিশ্নোই গ্যাং-কে নিয়ে তাদের দাবি ঘিরে দুই দেশের  মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। (Bishnoi Gang)


ব্রিজিতের বক্তব্য, "ভারত সরকার দক্ষিণ এশিয়ার কিছু গোষ্ঠীকে নিশানা করছে। বিশেষ করে কানাডায় খালিস্তানপন্থীদের নিশানা করা হচ্ছে। আমরা যে তথ্য হাতে পেয়েছি, সেই অনুযায়ী, সংগঠিত অপরাধচক্রকে এই কাজে ব্যবহার করছে ভারত। অপরাধমূলক কাজকর্মে যুক্ত একটি সংগঠন, বিশ্নোই গ্যাং-এর ক্ষেত্রে সর্বজনবিদিত। আমাদের বিশ্বাস, ভারত সরকারের এজেন্টদের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে ওই সংগঠনের।"



কানাডার মাটিতে ভারতীয় এজেন্টরা খুন, তোলাবাজি, ভীতি প্রদর্শন এবং জুলুম চালাচ্ছেন বলে দাবি করেন ডুহিনিও। তাঁদের দাবি, কানাডায় কর্মরত ভারতীয় কূটনীতিকরাও এই সংগঠিত অপরাধচক্রের সঙ্গে যুক্ত। বেআইনি ভাবে কানাডীয় নাগরিকদের সম্পর্কে তথ্য হাতিয়ে অপরাধমূলক কাজকর্মে যুক্ত সংগঠনের হাতে তুলে দেন তাঁর, এর ফলশ্রুতি হিসেবে নাশকতা চালানো হয়। তোলাবাজি, খুনের ঘটনাও ঘটে।


কানাডার এই অভিযোগ যদিও অস্বীকার করেছে ভারত সরকার। কানাডার মাটিতে নাশকতামূলক কাজকর্মে ভারত সরকারের সমর্থন রয়েছে বলে ট্রুডো যে দাবি করেছেন, তা-ও অস্বীকার করেছে দিল্লি। দিল্লির দাবি, এর সপক্ষে কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি কানাডা সরকার। যদিও ট্রুডো সরকারের দাবি, সব প্রমাণপত্রই তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু তার সাপেক্ষে কোনও পদক্ষেপ করেনি দিল্লি। বরং কথার খেলাপ করেছে তারা। 


বিতর্ক আরও বাড়িয়েছে আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের একটি রিপোর্ট। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল গত সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে কানাডার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈছক করেন।  সেখানে কানাডার আধিকারিক বিশ্নোই গ্যাং-কে নিয়ে প্রমাণপত্র তুলে ধরেন, যাতে বলা হয়, খালিস্তানি নেতা হরদীপ নিজ্জর এবং বাকিদের খুন করতে বিশ্নোই গ্যাং-কে বরাত দিয়েছিল ভারত। কানাডার এক আধিকারিককে উদ্ধৃতও করেছে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।


ভারত এবং কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রতি আরও তিক্ত হয়ে উঠেছে। কানাডায় ভারতীয় হাই কমিশনার সঞ্জয়কুমার বর্মা এবং তাঁর পাঁচ সহযোগীর কাজকর্মের দিকে আঙুল তুলেছিল কানাডা সরকার। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তে ভারত সরকার অসহযোগিতা করছে বলেও অভিযোগ তাদের। যদিও ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। সংঘাত আরও বাড়তি মাত্রা পেয়েছে 
যে বিশ্নোই গ্যাং-কে নিয়ে এবার ভারতের দিকে আঙুল তুলেছে, তাদের প্রধান লরেন্স বিশ্নোই গুজরাতের সবরমতী জেলে বন্দি। কিন্তু সেখান থেকে


লাগাতার তাঁর ভিডিও বার্তা প্রকাশিত হয় যেমন, তেমন ভিডিও কনফারেন্সে খবরের চ্যানেলের আলোচনাতেও অংশগ্রহণ করতে দেখা গিয়েছে তাকে।  কানাডাতেও লরেন্সের সংগঠনের শাখা রয়েছে। সেখান থেকে সংগঠনের কাজকর্ম দেখে গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রার। বাবা সিদ্দিকি ছাড়াও, পঞ্জাবের সঙ্গীত শিল্পী সিধু মুসেওয়ালাকে খুনের দায়ও স্বীকার করে বিশ্নোই গ্যাং। বছরের শুরুতে সলমন খানের বাড়ির বাইরেও এলোপাথাড়ি গুলি চালায় তারা। লাগাতার সলমনকে খুনের হুমকি দিয়ে আসছে ওই সংগঠন। এবার তাদের নিয়ে ভারত-কানাডা কূটনৈতিক সম্পর্কেও টানাপোড়েন শুরু হয়েছে।