সান্না (ইয়েমেন) : ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার আবেদন খারিজ করল ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্ট। জনৈক ইয়েমেনি নাগরিক তালাল আব্দো মাহডি-কে হত্যার দায়ে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে জেলবন্দি রয়েছেন নিমিশা। ২০১৮ সালে ইয়েমেনের আদালত তাঁর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে। সেই থেকে নিমিশার মুক্তির দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তাঁর পরিবার। এই পরিস্থিতিতে বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেছেন, 'সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াকিবহাল ভারত সরকার। প্রয়োজনমতো সাহায্য করা হচ্ছে। তবে, এর বেশি মন্ত্রকের তরফে কিছু করা যাবে না। কারণ, বিষয়টা আইনি।'


কে এই নিমিশা প্রিয়া ?


কেরলের পালাক্কাড় জেলার নার্স নিমিশা। স্বামী টনি থমাস এবং তাঁদের একমাত্র কন্যাকে নিয়ে ইয়েমেনে বসবাস করছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে গৃহযুদ্ধের কারণে যখন দেশ থেকে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করা নিষিদ্ধ হয়ে যায়, তখন থেকেই ইয়েমেনের বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করছিলেন নিমিশা। ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী এবং কন্যা ভারতে ফিরে আসেন। যদিও নিমিশা ইয়েমেনেই কাজ করে যাচ্ছিলেন।


এরপর ২০১৪ সালে তালাল আব্দো মাহডি-র সঙ্গে যোগাযোগ হয় নিমিশার। যিনি তাঁকে নতুন ক্লিনিক খুলতে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কারণ, ইয়েমেনি আইন অনুয়ায়ী একাজে পার্টনারশিপ প্রয়োজন। মাহডি-র সাহায্য নিয়ে ২০১৫ সালে ক্লিনিকও খোলেন নিমিশা। কিন্তু, শীঘ্রই তাঁদের মধ্যে মতভেদ শুরু হয়। মাহডি-র বিরুদ্ধে হেনস্থা, অত্যাচারের অভিযোগ তোলেন নিমিশা। এমনকী তাঁর পাসপোর্টও নিয়ে নেওয়া হয়। যার জেরে অসম্ভব হয়ে ওঠে নিমিশার বাড়ি ফেরা। এর পাশাপাশি মাহডি ইয়েমেনি প্রশাসনের কাছে নিজেকে নিমিশার স্বামী হিসাবে পরিয় দেন। সেই কারণে ইয়েমেনি প্রশাসনের থেকে নিমিশা কোনও সাহায্য পাচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ।


ওই সময় প্রিয়াকে হুমকি দিতে থাকেন মাহডি। তাঁর পাসপোর্ট কেড়ে নেন, যাতে নিমিশা ইয়েমেন ছাড়তে না পারেন। সমস্যায় পড়ে মাহডি-র বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। তার ভিত্তিতে মাহডিকে ২০১৬ সালে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু, মুক্তির পরও মাহডি প্রিয়ার জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করতে থাকেন।


অভিযোগ, ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই তালালকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেন প্রিয়া। যাতে তাঁকে ঘুম পাড়িয়ে পাসপোর্ট ফিরিয়ে নেওয়া যায়। তারপর পাসপোর্ট নিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। যদিও ওভারডোজের কারণে মৃত্যু হয় মাহডি-র। মাহডি মারা গেছেন বুঝতে পেরে, তাঁর শরীর অন্য একজনের সাহায্য নিয়ে জলের ট্যাঙ্কে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হয়। ২০১৮ সালে প্রিয়াকে এই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে ইয়েমেনের আদালত। পরে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হয়।