ওয়াশিংটন: ক্ষমতায় ফিরেই নাগরিকত্ব নিয়ে বড় ঘোষণা করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকার মাটিতে জন্মালেই আর নাগরিকত্বের অধিকার মিলবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। আর সেই ঘোষণার পরই আমেরিকার হাসপাতালগুলিতে কার্যত হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা প্রবাসী ভারতীয়রা হাসপাতালগুলিতে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। আইন কার্যকর হওয়ার আগে নির্ধারিত সময়ের আগে, সি সেকশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করতে চাইছেন তাঁরা, যাতে খাঁড়া নামার আগে তাঁদের সন্তানের নাম আমেরিকার নাগরিক হিসেবে নথিভুক্ত হয়ে যায়। (US Birthright Citizenship)
আমেরিকার মাটিতে জন্মালেই আপনা আপনি আর সেদেশের নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে না বলে ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। মা-বাবার মধ্যে অন্তত একজনকে আমেরিকার নাগরিক হতে হবে বা আমেরিকার সেনায় কাজ করতে হবে, তবেই তাঁদের সন্তান নাগরিকত্ব পাবে বলে নির্দেশনামাতেও সই করেছেন তিনি। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে সেই নির্দেশ কার্যকর হবে। তাই ২০ ফেব্রুয়ারির আগেই প্রবাসী ভারতীয় মহিলারা সন্তান প্রসব করে ফেলার পরিকল্পনা করছেন। এমনকি প্রিম্যাচিওর শিশু প্রসব করতেও আপত্তি নেই তাঁদের, অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের আগেই সন্তান প্রসব করতে চান তাঁরা। (Donald Trump)
টাইমস অফ ইন্ডিয়া-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে মুখ খুলেছেন নিউ জার্সির চিকিৎসক এস ডি রাম। তিনি জানিয়েছেন, অস্বাভাবিক হারে অনুরোধ আসছে তাঁর কাছে। সি সেকশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করে ফেলতে আগ্রহী অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় মহিলারা। ২০ ফেব্রুয়ারির আগে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়ে যাক বলে চাহিদা সকলেরই। এখনও পর্যন্ত তাঁর কাছেই প্রায় ২০টি এমন অনুরোধ এসেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক রাম।
ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, কেউ সাত মাস, কেউ আট মাস, কেউ বা ন’মাস ধরে অন্তঃসত্ত্বা। তাঁরা কেউই অপেক্ষা করতে রাজি নন। এমনকি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক মহিলা স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। নির্ধারিত সময়ের আগে সি সেকশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে গিয়েছেন তিনি। মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে নারাজ তিনি।
কিন্তু ঝুঁকির পরোয়া না করে কেন এমন আবেদন করছেন প্রবাসী ভারতীয়রা? এর নেপথ্যে আমেরিকার বর্তমান নাগরিকত্ব নীতির ভূমিকা রয়েছে। এই মুহূর্তে আমেরিকায় যে নীতি চালু রয়েছে, সেই অনুযায়ী, অভিবাসী দম্পতির সন্তান যদি আমেরিকায় জন্মায়, তাহলে জন্মসূত্রে সে আমেরিকার নাগরিক হিসেবেই গণ্য হবে। সেই শিশুর বয়স ২১ হয়ে গেলে, মা-বাবাও আমেরিকার স্থায়ী নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। ট্রাম্প নয়া নীতি চালু করার আগে তাই সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে।
আমেরিকার টেক্সাসের চিকিৎসক এস জি মুক্কালাও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে তিনি বলেন, “গত দু’দিনে প্রায় ২০ দম্পতির সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি ওঁদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। সময়ের আগে প্রসব হলে মা এবং সন্তান, দু’জনেরই জীবনে ঝুঁকি থেকে যায়। শিশুর ফুসফুস অপরিণত থেকে যায়, ওজন কম থাকে, স্নায়ুজনিত অন্য সমস্যাও দেখা দেয়।”
এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও নানা প্রতিক্রিয়া মেলেছে। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই মা-বাবারা এত বড় ঝুঁকি নিতে রাজি হচ্ছেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ আবার ‘আমেরিকান ড্রিম’কে কটাক্ষ করেছেন। তাঁদের মতে, প্রথমে গ্রিন কার্ড পেতে দীর্ঘ অপেক্ষা, তার পর আবার নাগরিকত্বের জন্য অপেক্ষা। আমেরিকায় গেলেও নাগরিকত্ব পেতেই বয়স ৫০-এর কোটায় পৌঁছে যাবে। এত ঝক্কির প্রয়োজন নেই বলেই মনে করছেন কেউ কেউ।
আমেরিকার নাগরিকত্ব নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণায় সর্বত্রই সাড়া পড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে ভারতীয় এবং চিনা অভিবাসীরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে ট্রাম্প নির্দেশনামায় সই করে দিলেও, আমেরিকার কংগ্রেসের ছাড়পত্র জরুরি। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মামলা দায়ের হয়েছে। আবার ট্রাম্পের এই নীতির সমর্থনেও এগিয়ে এসেছেন বহু মানুষ। তাই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না প্রবাসী ভারতীয়রা।