কাবুল: ‘আমার বাবা-মাকে যারা চোখের সামনে হত্যা করেছে, তাদের গুলি করে মেরে প্রতিশোধ নিতে পেরে আমি গর্বিত। ওরা আবার এলে ওদের মারতে আমি তৈরি’। বাবা-মার তালিবানি হন্তারকদের মেরে প্রতিশোধ নেওয়া প্রসঙ্গে এমনই প্রতিক্রিয়া আফগান কিশোরী কামার গুলের।


দিন দুয়েক আগে আফগানিস্থানের ঘোর প্রদেশে গুলের চোখের সামনে তার বাবা-মাকে টানতে টানতে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গিয়েছিল তালিবান জঙ্গিরা। তার চোখের সামনেই তাঁদের হত্যা করে তারা। তবে তখনই চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্ত্রাসবাদীরা কিছু বোঝার আগেই মুহূর্তে পরিবারের নিরাপত্তার জন্য ঘরে রাখা বন্দুক হাতে তুলে নেয় গুল। চালাতে শুরু করে গুলি। লুটিয়ে পড়ে দুই তালিবান জঙ্গি। আহত হয় আরও কয়েকজন। পরে তালিবানরা ফিরে এলেও গ্রামের লোকেরাই গুলি চালিয়ে তাদের হঠিয়ে দেয়।

সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে গুল বলেন, বাড়ির সামনে এসে বাবাকে খুঁজছিল জঙ্গিরা। বাবা গ্রামের মোড়ল ছিলেন। তিনি দেশের সরকারের সমর্থক। সে কারণেই তালিবানদের চক্ষূশূল। বাবাকে জঙ্গিরা ঘর থেকে বের করে আনতে গেলে বাধা দেন মা। তখন দুজনকেই টেনে-হিঁচড়ে ঘরের বাইরে বের করে আনে জঙ্গিরা। ঘরের ভিতরেই ছিল পারিবারিক একে-৪৭ রাইফেল। বাবা চালাতে শিখিয়েও দিয়েছিলেন। বাইরে বেরিয়ে চালাতে শুরু করে দিই গুলি। এক জঙ্গি পাল্টা মারতে আসছিল। ভাই আমার হাত থেকে বন্দুক নিয়ে তাকে মেরে ফেলে।

একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, হামলাকারীদের মধ্যে গুলের স্বামীও ছিল। রাজনৈতিক মতাদর্শের পার্থক্যের জন্য সে স্ত্রীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বেশ কিছুদিন। গুল অবশ্য এ ব্যাপারে কিছু বলেননি।

দেশের প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি গুলের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তার সাহসিকতার জন্য। মহিলা-অধিকার আন্দোলনকারী তথা আইনজীবী ফাওজিয়া কুফি ফেসবুকে লিখেছেন, প্রেসিডেন্টের কাছে আমার দাবি তিনি এই পরিবারের বাকি সদস্যদের নিরাপদ স্থানে রাখার ব্যবস্থা করুন।

প্রসঙ্গত, দেশের শয়ে শয়ে মানুষই গুল ও তার ভাইয়ের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং তাদের আফগানিস্থানের বাইরে কোনও নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন সরকারকে।