ঢাকা: বিজয় দিবসে মৌলবাদীদের উদ্দেশে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশ লালন শাহ, রবীন্দ্রনাথ, কাজি নজরুল, জীবনানন্দের বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ শাহজালাল, শাহ পরাণ, শাহ মকদম, খানজাহান আলি। এই শেখ মুজিব ও সাড়ে ১৬ কোটি বাঙালির বাংলাদেশ। এই দেশ সবার। আমরা কাউকে ধর্মের নামে বিশৃঙ্খলা ও বিভাজন তৈরি করতে দেব না।’


নিজের বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের কথা উল্লেখ করে হাসিনা বলেছেন, ‘১৯৭২ সালে জাতির পিতা বলেছিলেন, ধর্মকে রাজনীতির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু ১৯৭১ সালে যারা পরাজিত হয়েছিল, তাদের সঙ্গীরা এখন দেশকে ৫০ বছর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, কিন্তু তাঁরা ধর্মান্ধ নন। আমাদের ধর্মকে রাজনীতির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয়। প্রত্যেকেরই নিজের নিজের ধর্ম পালন করার অধিকার আছে। মুক্তিযুদ্ধে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সহ সব ধর্মের মানুষই যোগ দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের যে ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা ছিল, সেটা যাতে নষ্ট না হয়ে যায়, তা আমাদের দেখতে হবে।’

আগামীকাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেবেন হাসিনা। এই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত করা ছাড়াও একাধিক চুক্তিও হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। বাণিজ্য, যোগাযোগব্যবস্থা সহ ৯টি বিষয়ে চুক্তি হতে পারে। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর চিলাহাতি-হলদিবাড়ি রেল যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। এটি ফের চালু করার কথাও ঘোষণা করতে পারেন দুই প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনার অবদান অনস্বীকার্য। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ভারতীয় সেনার কাছে পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করে পাক সেনা। সেই দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। তারপর থেকেই দিনটি ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি ভারতীয় সেনার কাছেও দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির উপর জোর দিয়েছেন হাসিনা। তিনি মৌলবাদ দমনেরও চেষ্টা করছেন। কিন্তু গত কয়েকমাসে বাংলাদেশে মৌলবাদীদের দাপট অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেই কারণেই আজ মৌলবাদীদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিলেন হাসিনা।

করোনা অতিমারী মোকাবিলায় বাংলাদেশের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত। দু’দেশের মধ্যে একটি নতুন মালবাহী ট্রেন চালু হয়েছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে চিন। এই পরিস্থিতিতে ঢাকার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে তৎপর নয়াদিল্লি।