ওয়াশিংটন: বরাবর পর্দার আড়ালে থেকেছেন। প্রচারের আলো থেকে দূরত্ব বজায় রাখা তাঁর পছন্দ। ‘সুখী গৃহকোণ’ তাঁর পছন্দের। তিনি জিল বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের ঘরণী।

স্বামীর রাজনৈতিক জীবন নিয়েও কোনও উচ্চাশা ছিল না জিলের। বরং স্বামী রাজনীতির জগত থেকে সরে আসুন, এটাই ছিল তাঁর মনের ইচ্ছা।এমনকী, প্রচারপর্বেও তাঁর হয়ে মাঠে নামাতে চাননি জিল। আসলে জিল যেন বড্ড বেশি ‘সাধারণ’ আর পাঁচজনের মতো। তাঁর পরিচয় শিক্ষাজগতে। কাজের জগতে আরেকভাবে মানুষ তাঁকে চেনেন। ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতার কাজ করছেন দীর্ঘদিন। কর্মক্ষেত্রের বাইরে রাজনীতি, রাজনৈতিক উত্থান কোনও কিছুই তাঁকে তেমনভাবে ছুঁয়ে যায়নি কোনওদিন। মেলানিয়া ট্রাম্প, মিশেল ওবামা, হিলারি ক্লিন্টনের মতো তাঁর নিজের কোনও রাজনৈতিক ক্ষমতা বা পরিচয় নেই। তাঁর জন্য জিলের আফশোসও নেই।

আর ঠিক সে জন্য স্বামী রাজনৈতিক জীবনে সিঁড়ি বেয়ে যতই উপরে উঠুন না কেন, এখনও পর্যন্ত  জিল খুব সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত। অর্থাৎ নিজেকে নিয়ে প্রচার বা বাগাড়ম্বর তিনি একেবারে অভ্যস্ত নন। সরকারিভাবে এখনও দু’মাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আনুষ্ঠানিকভাবে জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন আগামী বছরের জানুয়ারিতে। কিন্তু হোয়াইট হাউসের সঙ্গে এর আগেও তাঁর সম্পর্ক ছিল। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টে বারাক ওবামার শাসনকালে তিনি ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। সেকেন্ড লেডি হিসেবে যে কয়েকজন জিলকে দেখেছেন বা তাঁর সমন্ধে শুনেছেন তা কিন্তু হাতে গুণে বলার মতো। সম্ভবত সে জন্য মার্কিন সেকেন্ড লেডি সম্পর্কে হোয়াইট হাউসের সরকারি প্রোফাইলে লেখা ছিল, ‘একজন মা, একজন ঠাকুমা, আজীবন ধরে যিনি শিক্ষক, গর্বিত সামরিক মা, একজন সক্রিয় সদস্য---যিনি উত্তর ভার্জিনিয়ার কমিউনিটি কলেজে পুর্ণ সময়ের ইংরেজির একজন অধ্যাপক।’

১৯৯৩ সালে জিলের চার বন্ধুর স্তন ক্যান্সার হয়। তাঁদের কষ্ট, উপলব্ধি, লড়াই সামনে থেকে দেখে জিল ভাবেন কিছু একটা করতে হবে। এরপর ডেলওয়্যারে বিডেন ব্রেস্ট হেলথ ইনিশিয়েটিভ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন স্কুলের ১০ হাজার মেয়েকে স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন করেছে জিলের এই উদ্যোগ। কীভাবে প্রথম স্টেজে স্তন ক্যান্সার ধরা যায়, সে বিষয়ে সচেতন করেছেন তিনি।

কে এই জিল?

পাঁচ বোনের মধ্যে জিল সবচেয়ে বড়। বিয়ের আগের নাম জিল জেকবস। ফিলাডেলফিয়ায় বড় হয়ে ওঠা।

চার দশকের বেশি সময় তিনি শিক্ষা জগতের সঙ্গে জড়িত। ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে ইউনিভার্সিটি অব ডেলওয়্যার থেকে তিনি পিএইচডি শেষ করেন। তাঁর ডেসারটেশন পেপার ছিল কমিউনিটি কলেজগুলিতে সর্বাধিক শিক্ষার্থীকে ধরে রাখা। তিনি দুটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর। সবচেয়ে বড় কথা কাজ এবং সংসার সামলাতে সামলাতে স্নাতকোত্তরে উত্তীর্ণ হয়েছেন জিল।

ডেলাওয়্যারের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে জিল পরিচিত মুখ। কমিউনিটি কলেজে তিনি ইংরেজির অধ্যাপক ছিলেন। পাবলিক হাইস্কুল ও সাইক্রিয়াটিক হসপিটালেও পড়িয়েছেন। ওয়াশিংটনে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ডেলাওয়্যারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল নিবিড়। কর্মজগতের বেশ খানিকটা সময় কাটিয়েছেন এখানেই।

জো-র সঙ্গে বিবাহ 

জো-র জীবনে জিলের আগমন বেশ পরের দিকে। জো-র প্রথম স্ত্রী ও কন্যা এক দুর্ঘটনায় মারা যান। জো-র দুই ছেলে সেই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। সেটা ১৯৭২ সাল। এর পাঁচ বছর পর জো বিয়ে করেন জিলকে। জো-র দ্বিতীয় পক্ষের বিবাহে একটি মাত্র কন্যা সন্তান—অ্যাশলে। জিল, জো-র আগের পক্ষের দুই ছেলেকে বিউ ও হান্টার বলে ডাকতেন। ২০১৫ সালে মস্তিস্কের ক্যান্সারে মারা যান বিউ। তিনি পেশায় আইনজীবী ছিলেন। প্রথম পক্ষের আরেক ছেলে হান্টার পেশায় আইনজীবী।

অ্যাশলে সমাজকর্মী বলেই পরিচিত। অ্যাশলে সহ জো-র সন্তানরা সকলেই বিবাহিত। দুই পক্ষ মিলিয়ে  আদরের পাঁচ নাতিনাতনি।

জো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬-তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি। সেদিন থেকে আমেরিকার ফার্স্ট লেডি হবেন জিল। তিনি স্বামীর জয়ের খবর পাওয়ার পরেই ট্যুইট করেছেন। তিনি লেখেন, ‘তিনি আমাদের পরিবারের সকলের জন্য প্রেসিডেন্ট হবেন।’ মিষ্টি, ভালোবাসা মাখা এই ট্যুইট কিন্তু জিল অনুরাগীদের অনেকের মন ছুঁয়ে গিয়েছে।