নয়াদিল্লি: অ্যামাওট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লোরোসিস। চিকিৎসা পরিভাষায় এমন খটমট শব্দের রোগে ভুগছিলেন প্যাট কুইন। রবিবার মাত্র ৩৭ বছর বয়সে মারা গেলেন তিনি। স্নায়ুতন্ত্রের এই রোগ সংক্ষেপে এএলএস নামে বেশি পরিচিত। এই রোগের বিরুদ্ধে জনসচেনতা গড়ে তোলার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ নামে একটি প্রচার কর্মসূচি নিয়েছিলেন। যাতে যোগ দিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে বিনোদন ও খেলার জগতের তারকারা।


২০১৩ সাল। তখন সদ্য তিরিশে পা দিয়েছেন নিউইয়র্কের ইওনকারসের বাসিন্দা প্যাট কুইন। অ্যামাওট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লোরোসিস বাসা বাঁধল তাঁর শরীরে। এই অসুখ আবার লুই ঘেগরিস ডিজিজ বলেও পরিচিত। স্নায়ুতন্ত্রের এই রোগে মস্তিস্ক ও মেরুদণ্ডের স্নায়ুর কোষ নিউরনে আক্রমণ করে। প্রথমে পেশীর সমস্যা দেখা দেয়। হাঁটা, দৌড়নো বা লেখার ক্ষেত্রে সমস্যা শুরু হয়। কথা বলার শক্তিতেও প্রভাব ফেলে। ক্রমে ক্রমে শক্তি হারিয়ে নড়াচড়ার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। এমনকি শেষ পর্যন্ত ফুসফুসের পেশী এতটা দুর্বল হয়ে যায় যে শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষমতা কমতে থাকে। এই মারণ রোগের সঙ্গে অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছেন প্যাট কুইন। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায় এই রোগ নিয়ে প্রচার করার চেষ্টা করে গিয়েছেন নিজের যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা ভুলে।প্যাট কুইন চলে যাওয়ার পর এএলএস কমিউনিটির তরফে বিশেষ সম্মান জানানো হয়েছে তাঁকে। তাদের তরফে লেখা হয়েছে, ’’আমরা যাঁরা তাঁকে চিনতাম তাঁরা বিধ্বস্ত হলেও এটা বলতে পারি এলএলএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি যা করেছিলেন তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা প্যাটের পরিবার, তাঁর বন্ধুমহল এবং শুভ্যানুধায়ীদের পাশে রয়েছি। প্যাটকে এএলএস কমিউনিটির অনেকে এবং বিশ্বের অনেকেই তাকে ভালোবাসতেন, পছন্দ করতেন।‘‘



২০১৪ সালে সোশ্যাল মিডিয়ায় গলফার ক্রিস কেনেডির আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ দেখেছিলেন প্যাট। কুইন এবং তাঁর সহ-প্রতিষ্ঠাতা পিটি ফ্রেটস মিলে এই চ্যালেঞ্জকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। এএলএস অ্যাসোসিয়েশনের মতে সোশ্যাল মিডিয়ায় এটাই এখনও পর্যন্ত সচেনতামূলক সবচেয়ে জনপ্রিয় কর্মসূচি।এই কর্মসূচি সাড়া ফেলেছিলো বিশ্বের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে। খেলা বা বিনোদন জগতের তারকা, রাজনীতিবিদ এমনকি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত সাড়া দিয়েছিলেন। এই ভিডিয়ো কয়েকলক্ষ বার দেখেছেন নেটিজেনরা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় সাড়া ফেলা এই কর্মসূচির জেরে রাতারাতি সরকার থেকে জনগন এএলএস নিয়ে সচেতন হয়ে উঠেছে। এই রোগ নিরাময়ের চিকিৎসা আজও নেই। কিন্তু তার জন্য যে গবেষণা দরকার এবং গবেষণায় টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রেও এই কর্মসূচি সরকারকে উদ্যোগী করেছিল বলে মনে করেন অনেকে।

প্যাট কুইনের এই উদ্যোগের জন্য এএলএস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে ২০১৫ সালে তাঁকে ’ আইএলএস হিরো‘ে বলে সম্মানিত করা হয়।

প্যাট চলে যাওয়ায় শোকাহত এএলএস অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু প্যাটের নেওয়া চ্যালেঞ্জকে তাঁরা এগিয়ে নিয়ে যাবেন, এটাই তাঁদের অঙ্গীকার। প্যাটকে আজীবন ভালোবাসা জানানোর জন্য তাঁদের কাছে এটাই যে একমা্ত্র রাস্তা।