কলকাতা: করোনা ভাইরাসে বিশ্বের যে দেশগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার অন্যতম ইতালি। এখনও পর্যন্ত ইউরোপের এই দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষ ৩৮ হাজারেরও বেশি। মৃত ৩৪,৪০৫। তবে মাস দুয়েক আগেও পরিস্থিতি যতটা ভয়াবহ ছিল, সেটা এখন আর নেই। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছে ইতালি। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে।


ইতালির ইতালির ট্রেভিসো প্রদেশের মন্টেবেলুনা শহরে আছেন বঙ্গসন্তান বিপ্লব দেবনাথ। পেশায় ফ্লাওয়ার ডিজাইনার এই যুবক দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ইতালিতে আছেন। তিনি সেদেশের নাগরিকত্বও গ্রহণ করেছেন। তবে অনেক দূরে থাকলেও, এখনও দেশের প্রতি টান রয়েছে বিপ্লবের। সেই কারণে ইতালিতে মৃত্যুমিছিল দেখে ফেসবুকের মাধ্যমে বারবার বাংলার মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি লকডাউনের সময় নিজের শহরের বয়স্ক মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। যে বয়স্ক ব্যক্তিরা একা থাকেন, দায়িত্ব নিয়ে বাজার করে তাঁদের প্রত্যেকের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলেন এই বঙ্গসন্তান। সমাজের প্রতি এই কর্তব্যের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ইতালি সরকারের কাছ থেকে বিশেষ সম্মান পেতে চলেছেন।

ইতালি থেকে ফোনে এবিপি আনন্দকে বিপ্লব জানালেন, ‘এখন পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। ইতালির সবাই সচেতন হয়ে গিয়েছে। ফলে করোনা সংক্রমণ বাড়ার কোনও খবর নেই। এরই মধ্যে ভাল খবর হল, ইতালির স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্তো স্পেরাঞ্জা জানিয়েছেন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনার প্রতিষেধক নিয়ে যে গবেষণা চলছে, তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ইতালি। জার্মানি, ফ্রান্স, হল্যান্ডও করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করবে। রোমের একটি সংস্থা ভ্যাকসিন তৈরির দায়িত্ব নিচ্ছে। আশা করা যায়, খুব তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে যাবে। সেটা হলে অসংখ্য মানুষ স্বস্তি পাবেন।’

এ মাসেই আত্মীয়র বিয়ে উপলক্ষে কলকাতায় আসার কথা ছিল বিপ্লবের। কিন্তু আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ থাকায় তাঁর পক্ষে এখন দেশে ফেরা সম্ভব হচ্ছে না। জানালেন, ডিসেম্বরের শেষদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কলকাতায় আসার ইচ্ছা রয়েছে। তবে দেশে ফিরতে না পারলেও, এখন বিনা বাধায় ইতালির বিভিন্ন জায়গায় যেতে পারছেন তিনি। কয়েকদিন আগেই সপরিবারে ভেনিস বেড়াতে গিয়েছিলেন। সে বিষয়ে তিনি জানালেন, ‘সোমবার পর্যন্ত ইউরোপে অভিবাসন বন্ধ ছিল। এখন ব্যবসা বা পেশার প্রয়োজনে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া যাবে। তবে তার আগে চিকিৎসকের কাছ থেকে সুস্থতার শংসাপত্র নিতে হবে। পর্যটকদের ভিড় কবে আবার দেখা যাবে, সেটা এখনই বলতে পারছি না। এতদিন জানতাম, ভেনিস ঘুমোয় না। এর আগে যখনই গিয়েছি, তখনই দেখেছি জমজমাট শহর. সবসময় পর্যটকরা ঘুরছেন। কিন্তু এবার গিয়ে দেখলাম, পর্যটক প্রায় নেই। সন্ধে সাতটার মধ্যে সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ভেনিসের এই চেহারা আমার মোটেই ভাল লাগল না। আশা করি দ্রুত স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে।’

একে বাঙালি, তায় আবার ইতালিতে থাকেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ফুটবল খেলা ভালবাসেন বিপ্লব। এ বিষয়ে তিনি জানালেন, ‘সিরি আ’  লিগ ফের শুরু হয়েছে। তবে এখন মাঠে দর্শকদের প্রবেশাধিকার নেই। ভবিষ্যতে ৩০ শতাংশ দর্শকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে।