শ্রীনগর: জঙ্গি হামলায় ফের রক্তাক্ত উপত্যকা। জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়ায় এবার হামলা জঙ্গিদের। সেনার কনভয় লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়া হয়, তাতে পাঁচ জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ছ'জন। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে আহতদের। গ্রেনেড হামলার পর সেনার সঙ্গে গুলি বিনিময়ও হয় জঙ্গিদের। কিন্তু ঘন জঙ্গলে ঢুকে পড়ে জঙ্গিরা। তাদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। (Kathua Terror Attack)


সোমবার দুপুর সওয়া ৩টে নাগাদ কাঠুয়ার মেছেদি এলাকায় সেনার কনভয় লক্ষ্য করে হামলা চালায় জঙ্গিরা। সেনা সূত্রে খবর, মেছেদি-কিন্দলি-মলহার রোডে রোজকার মতো টহল দিতে বেরোয় সেনার কনভয়। সেই সময় গ্রেনেড হামলা ছোড়ে জঙ্গিরা। এলোপাথাড়ি গুলিবৃষ্টিও করে। সেনার তরফেও পাল্টা জবাব দেওয়া হয়। কিন্তু হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সফল হয় জঙ্গিরা। (Jammu And Kashmir News)


একজন বা দু'জন নয়, দলবল নিয়ে জঙ্গিরা এই হামলা চালিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, সীমান্ত পেরিয়ে উপত্যকায় প্রবেশ করে জঙ্গিরা। জঙ্গিদের বড় একটি দল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যে অনুপ্রবেশ করেছে উপত্যকায়, মাস দুয়েক আগেই সেই খবর এসেছিল। পর পর যেভাবে উপত্যকায় একের পর এক হামলা চলছে, তাতে সীমান্ত পেরিয়ে আসা জঙ্গিদের হাত রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। 



সোমবার যে জওয়ানদের উপর হামলা চালায় জঙ্গিরা, কয়েক সপ্তাহ আগেই নর্দার্ন-ওয়েস্টার্ন কম্যান্ডের সীমানায় অতিরিক্ত বাহিনী হিসেবে মোতায়েন করা হয় তাঁদের। দুই দিক থেকে তাঁদের কনভয়ে হামলা চালানো হয় বলে জানা গিয়েছে। প্রথমে গ্রেনেড ছোড়া হয়, তার পর এলোপাথাড়ি গুলি। পাল্টা সেনা গুলি চালালে ঘন জঙ্গলে আশ্রয় নেয় জঙ্গিরা। সোমবার রাতেও গুলির শব্দ শোনা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। আধা সামরিক বাহিনীও তল্লাশিতে যোগ দেবে বলে খবর।


জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়া অত্যন্ত স্পর্শকাতর এলাকা। একদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে, অন্য দিকে পঞ্জাব এবং হিমাচলপ্রদেশ সীমানা। জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে অন্য রাজ্যেও প্রবেশ করতে পারে।  নয়ের দশকে এবং দু'দশক আগে পর্যন্ত এই মেছেদি এলাকাকে নাশকতামূলক কাজকর্মের 'হটবেড' বলে উল্লেখ করা হতো। 


সোমবারের ঘটনায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ নিহতদের পরিবার-পরিজনদের সমবেদনা জানিয়েছেন। জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে, স্থানীয়রা যাতে আতঙ্কিত না হন, আর্জি জানিয়েছেন তিনি। কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী কড়া পদক্ষেপের আর্জি জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, 'সেনার উপর এই কাপুরুষোচিত হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়। গত এক মাসে এই নিয়ে পঞ্চম হামলা চলল, যা দেশের জাতীয় নিরাপত্তা এবং জওয়ানদের উপর ভয়ঙ্কর আঘাত। লাগাতার যে হামলা চলছে, তা নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন, শুধু ফাঁপা ভাষণ এবং মিথ্যে প্রতিশ্রুতিতে কাজ হবে না। এই কঠিন সময়ে আমরা দেশের পাশে রয়েছি'।


আরও পড়ুন: Supreme Court On NEET UG: 'প্রশ্নফাঁস হয়েছে, এতে কোনও সন্দেহ নেই' NEET মামলায় মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের


গত ৪৮ ঘণ্টায় এই নিয়ে উপত্যকায় দ্বিতীয় বার সেনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালাল জঙ্গিরা। রবিবার রাজৌরিতে সেনাশিবিরে হামলা চালানো হয়, যাতে এক জওয়ান আহত হন। পাশাপাশি, ২৪ ঘণ্টা আগে কুলগামেও জঙ্গিদের সঙ্গে গুলি বিনিময় চলে সেনার, যাতে ছয় জঙ্গির মৃত্যু হয়। শনিবার থেকে গুলি বিনিময় শুরু হয়, দুই জওয়ানও প্রাণ হারান তাতে, আহত হন এক জন। 


এর আগে, গত মাসেও এই কাঠুয়াতেই সেনা ও জঙ্গিদের মধ্যে গুলি বিনিময় চলে। সেবার হীরানগর তেহসিলের সইদা গ্রামে সেনার অভিযানে মারা যায় দুই জঙ্গি। এক সিআরপিএফ জওয়ানও প্রাণ হারান। গত কয়েক সপ্তাহে এই নিয়ে একাধিক বার জঙ্গি হামলার সাক্ষী হল উপত্যকা। ৯ জুন কাটরামুখী পুণ্যার্থীদের বাসে হামলা চালায় জঙ্গিরা, যাতে ন'জন মারা যান। গত ১১-১২ জুন ডোডায় জঙ্গি হামলা চলে। ১১ জুন জয়েন্ট চেক পোস্টে হামলা চালায় জঙ্গিরা।  ১২ জুন কোটা টপে গুলি বিনিময় চলে। ২৬ জুন আবার ডোডায় সেনা অভিযানে তিন জঙ্গির মৃত্যু হয়। পর পর জঙ্গি হামলার জেরে অনুপ্রবেশকারী চার পাকিস্তানি জঙ্গির এক এক জনের মাথার দাম ৫ লক্ষ টাকা বলে ঘোষণাও করে সেনা।


লাগাতার এই জঙ্গি হামলা নিয়ে রবিবার নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, লস্কর-ই-তৈবার একটি শাখা উপত্যকায় নাশকতামূলক কাজকর্মে মদত জোগাচ্ছে। পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের কসুর জেলার সইফুল্লা সাজিদ জাঠকে এর চক্রী হিসেবে  চিহ্নিতও করা হয়। NIA-র তরফে তার মাথার দামও ১০ লক্ষ টাকা রাখা হয়। কিন্তু উপত্যকার নিরাপত্তায় কোনও খামতি রাখা হচ্ছে বলে দাবি করা হলে, বার বার এই ধরনের হামলা হচ্ছে কী করে, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।