কোঝিকোড়: পাড়ার পুকুরে সাঁতার কেটে স্নান। এর পরই মৃত্যু কিশোরের। এই ঘটনায় মারাত্মক তথ্য উঠে এল। জানা গিয়েছে, পুকুরের জলে ক্ষতিকারক অ্যামিবার বাস ছিল। সেই থেকে ওই কিশোরের মস্তিষ্কে সংক্রমণ ঘটে। শেষ পর্যন্ত অ্যামেবিক মেনিনজিএনসেফালাইটিসে মৃত্যু হয় ওই কিশোরের। বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ওই কিশোরের। (Brain Eating Amoeba)


কেরলের কোঝিকোড় থেকে এই ঘটনা সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, ১৪ বছরের ওই কিশোর সম্প্রতি পাডডার পুকুরে সাঁতার স্নান করেছিলেন। কেরলের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ওই পুকুরের দূষিত জলেই বাস ছিল বিরল প্রকৃতির অ্যামিবা, যা মানুষের মস্তিষ্কে সংক্রমণ ঘটায়। ওই সংক্রমণকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় অ্যামেবিক মেনিনজিওএনসেফালাইটিস, তাতেই মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে। (Amoebic Meningoencephalitis)


মস্তিষ্কে অ্যামিবা সংক্রমণের জেরে এই নিয়ে মে মাস থেকে কেরলে তিন জনের মৃত্যুর ঘটনা সামনে এল। এর আগে, মলপ্পুরমে পাঁচ বছর বয়সি এক মেয়ের মস্তিষ্কে অ্যামিবা সংক্রমণ ধরা পড়ে। গত ২১ মে মারা যায় মেয়েটি। ২৫ জুন কন্নুরে ১৩ বছর বয়সি এক কিশোরীও একই সংক্রমণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে খবর মিলেছে। 


আরও পড়ুন: Hina Khan: চলছে ক্যান্সারের চিকিৎসা, ছোট করে চুল কেটে ফেললেন হিনা খান, আবেগঘন মুহূর্তেও মুখে রইল চওড়া হাসি


চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পুকুর, নদী এবং হ্রদের উষ্ণ জলে Naegleria Fowleri নামের এক ধরনের অ্যমিবা বাস করে। পুকুরে স্নান করতে নামলে নাক দিয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ওই অ্যামিবা। এর পর মস্তিষ্কের কোষে প্রদাহজনিত সমস্যা দেখা দেয়। সেই থেকেই  অ্যামেবিক মেনিনজিওএনসেফালাইটিস সংক্রমণ ঘটে, যা থেকে মৃত্যুও হতে পারে। 


Naegleria Fowleri নামক ওই অ্যামিবা একমাত্র মাইক্রোস্কোপেই ধরা পড়ে। জল এবং কাদায় তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। পুকুরের জলে সাঁতার এবং স্নানের সময় নাক দিয়ে ওই অ্যামিবা শরীরে প্রবেশ করে। আস্তে আস্তে মস্তিষ্কের দিকে এগোয় সে, তাতেই রোগের সূত্রপাত। মাথার যন্ত্রণা, জ্বর, বমিভাব, বমি এই রোগের কিছু উপসর্গ। মানসিক ভাবেও অস্বস্তি বোধ করেন রোগী। 


এমনিতে বিরল হলেও, পুকুর, নদী বা হ্রদে স্নান করলে যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই জলে ডুব দেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। জলে নামলেও নোজ ক্লিপ ব্যবহার করতে বলা হয়, যাতে দূষিত জল নাকে না ঢোকে। 


অ্যামেবিক মেনিনজিএনসেফালাইটিস নিরাময়ের উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতির আবিষ্কার হয়নি এখনও পর্যন্ত। তবে চিকিৎসকরা amphotericin B, Azithromycin, fluconazobe, rifampin, miltefosine, dexamethasone প্রয়োগ করেন রোগীর উপর। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানিয়েছে, অ্যামেবিক মেনিনজিএনসেফালাইটিসে আক্রান্ত রোগীরা সংক্রমিত হওয়ার ১ থেকে ১৮ দিনের মধ্যেই প্রাণ হারান। দ্রুত তাঁদের অবস্থার অবনতি হয়।  কোমায় চলে গিয়ে পাঁচ দিনের মাথায় মৃত্যুর উদাহরণও রয়েছে। এর আদে, ২০১৭ এবং ২০২৩ সালেও কেরলের আলাপুঝায় অ্যামেবিক মেনিনজিএনসেফালাইটিস রোগের হদিশ মেলে।