নদিয়া : দু'চোখে ছিল আগুনখেকো দীপ্তি, আর বুকে দেশকে স্বাধীন করার একমাত্র সংকল্প। বসন্ত কুমার বিশ্বাস। নদিয়া থেকে ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে বর্তমান অলিম্পিক্সের আয়োজক শহর টোকিওতেও যাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। অত্যাচারী ইংরেজ সরকার মাত্র ২০ বছর বয়সে যাঁকে ঝুলিয়েছিল ফাঁসির মঞ্চে। কিন্তু নদিয়ার পরাগাছার এই বীর সন্তানের উজ্জ্বল উপস্থিতি এখনও জ্বলজ্বল করে ইতিহাসের পাতায়। 


কৃষ্ণনগরের রবীন্দ্র ভবনের সামনে যেমন রয়েছে তাঁর প্রতিকৃতি, তেমনই রয়েছে টোকিও-র এক পার্কে। যা উন্মোচিত করেছিলেন খোদ রাসবিহারী বসু। ভালোবেসে বসন্ত কুমার বিশ্বাসকে 'বিসে' বলে ডাকতেন রাসবিহারী বসু। ১৮৯৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জন্মানো বসন্ত কুমার বিশ্বাস তরুণ বয়সেই রাসবিহারী বসু ও অমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়েোর হাত ধরেই যুগান্তর গোষ্ঠীতে নাম লিখিয়েছিলেন। আর উজ্জ্বল এই যুবকের কাঁধেই সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের এক গুরুভার তুলে দিয়েছিলেন তাঁরা। ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিংকে হত্যা করে অত্যাচারী ইংরেজদের বার্তা দেওয়ার।


বসন্ত কুমার বিশ্বাসের বয়স তখন মাত্র ১৭। দিল্লির চাঁদনি চকে গিয়ে আক্রমণের দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। এক মহিলার সাজ ধরে ১৭ বছরের অকুতভয় বসন্ত কুমার বিশ্বাস দিল্লি গিয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিংয়ের ঘোড়-সওয়ারির কনভয়ে ছুড়েছিলেন বোমা। সওয়ারির বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছিলেন। প্রবলভাবে আহত হলেও অবশ্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিং। অবশ্য এই ঘটনার পর থেকেই গোটা দেশজুড়ে ব্রিটিশরা কার্যত খানাতল্লাশি চালিয়েছিল বসন্ত কুমার বিশ্বাসকে খুঁজে পেতে। কিন্তু যুগান্তরের বীর যোদ্ধাকে তিন বছরেরও বেশি সময় নাগালের মধ্যে আনতে পারেনি তারা। শেষমেশ অবশ্য গ্রামের বাড়িতে বাবার শেষকৃত্যের কাজে হাজির হলে ধরা পড়ে গিয়েছিলেন তিনি।


দিল্লি-লাহোর কন্সপিরেসি কেসের আদলে কঠিন শাস্তির সাজা দেওয়ার মঞ্চ ব্রিটিশরা প্রস্তুত করে তাঁর বিরুদ্ধে। ট্রায়াল শেষে তাঁর আজীবন কারাদণ্ড হলে ফের লাহোর হাইকোর্টে দ্বারস্থ হয় তাঁরা। যেখানে বসন্ত কুমার বিশ্বাসকে ফাঁসির সাজা শোনানো হয়। ব্রিটিশ শাসিত ভারতের পঞ্জাবের আম্বালতে ১৯১৫ সালের ১১ মে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় ২০ বছরের তরতাজা যুবককে। অত্যাচারী ব্রিটিশরা বসন্ত কুমার বিশ্বাসের প্রাণ কেড়ে নিলেও তাঁর আত্মবলীদান কার্যত অমরগাথা হয়ে রয়ে গিয়েছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে। বিংশ শতকে সবথেকে কম বয়সী অকুতভয় শহিদ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের তালিকায় উজ্জ্বলভাবে রয়ে গিয়েছে বীর এই বঙ্গসন্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য দেওয়া আত্মবলিদান।