ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা: করোনার দাপট লণ্ডভণ্ড করেছে স্বাভাবিক জীবন যাপন। বদলে গেছে অনেক কিছুই। যেমন শিশুদের জীবন থেকে প্রায় মুছে যেতে বসেছে স্কুলবেলা। পড়াশোনা এখন চার দেওয়ালের আড়ালে মুঠোফোনে বন্দি। অনলাইনে, ভিডিও কলেই চলছে পড়া, পরীক্ষা, ফলপ্রকাশ সব। আর এই অনলাইনে পড়াশোনার মাঝেই ধীরে ধীরে বাড়ছে অনলাইম গেমের প্রতি আসক্তি। বদলে যাচ্ছে বাচ্চাদের আচার-আচরণ। এমন পরিস্থিতিতে অনলাইন গেমগুলি বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণের আর্জি জানিয়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে আবেদন করলেন পেশায় আইনজীবী একদল অভিভাবক।


ক্লাসরুমে পাশাপাশি বসে সেই চেনা খুনসুটি আর নেই। হারিয়ে গেছে টিফিন ভাগ করে খাওয়ার চেনা ছবি। ছুটির ঘণ্টা বাজলেই স্কুলের মাঠে হুড়োহুড়ি নেই। প্রায় দেড় বছর ধরে, এই কচিকাঁচাদের কাছ থেকে স্কুল জীবন কেড়ে নিয়েছে মারণ ভাইরাস করোনা। পড়াশোনা পুরোটাই হচ্ছে ভার্চুয়ালি। তবে, এই অনলাইন ক্লাসের আড়ালে ওত্‍ পেতে রয়েছে আরেকটি বিপদ। অনলাইন গেম! সেই গেমেই আসক্ত হয়ে পড়ছে পড়ুয়ারা। সবসময় অভিভাবকরাও যে নজর রাখতে পারছেন তাও নয়। সেই সুযোগেই গেমের নেশায় বুঁদ হয়ে যাচ্ছে কচিকাঁচার দল। আর এর ফল হচ্ছে ভয়ানক। বাচ্চাদের আচার-আচরণ বদলে যাচ্ছে, বাড়ছে লুকিয়ে গেম খেলার প্রবণতা। শুধু তাই নয়, অভিভাবকদের দাবি, গেম খেলতে বাধা দিলেই হিংসাত্মক হয়ে উঠছে তারা। জিনিসপত্র ভাঙচুর করছে। এমনকী রেগে গিয়ে কেউ কেউ মা-বাবাকে মারতেও আসছে!


অভিভাবক মুনমুন তিওয়ারির কথায়, 'গুলি চলে, এমন ধরণের গেম খেলতে ভালবাসে আমার সন্তান। নিষেধ করলে জিনিস ভাঙছে। মারার জন্য উদ্যত হচ্ছে।' আসক্তি ছাড়ানোর জন্য চিকিত্‍সকেরও দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে, অনলাইন গেমগুলি বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণের আর্জি জানিয়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন পেশায় আইনজীবী একদল অভিভাবক।


আইনজীবী সঞ্জীব মিত্র জানাচ্ছেন, 'আমার ছেলে আগে এমন ছিল না। এক বছর ধরে এরকম করছে। মায়ের সঙ্গে কথায় কথায় তর্কাতর্কি হচ্ছে। মোবাইল নিয়ে বাথরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে।'


অপর অভিভাবক সুদেষ্ণা মজুমদারের কথায়, 'ছেলে কথা শুনছে না। সারাদিন ল্যাপটপ মোবাইলে আসক্ত। প্রথমে অল্প ছিল। এখন তা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। অদ্ভুত আচরণ করছে, পড়াশোনায় মন নেই।' আসক্তি ছাড়ানোর জন্য পোষ্যও কেনা হয়। কিন্তু তাতে কোনও লাভই হয়নি বলে আক্ষেপ তাঁর। অনেক মা-বাবা আবার সন্তানের মতিগতি ফেরাতে মনোবিদের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন। 


মনোবিদ নীলাঞ্জন চন্দ জানাচ্ছেন, 'অনেক অভিভাবকই আসেন এই সমস্যা নিয়ে। তখন আমাদের মেডিকেশন করতে হয় এই পরিস্থিতি কন্ট্রোল করার জন্য।'


মনোবিদ ওপি সিংহের কথায়, 'বাচ্চাদের সঙ্গে মেলামেশা বাড়াতে হবে। ওদের ভার্চুয়াল জগৎ থেকে বেরতে হবে।'


পড়াশোনার জন্য অনলাইন গেম বন্ধ করার আবেদন জানানো হয়েছে কেন্দ্রের কাছে। একই সঙ্গে পুনরায় স্কুল খোলার দাবি জোরালো হচ্ছে।