সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমন লাগাতার তেতে উঠছে রাজ্যে, তেমনই কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) সংঘাতের আবহও উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। অতি সম্প্রতিই কলকাতা হাইকোর্টে দেখা গিয়েছিল নজিরবিহীন সংঘাত।  ডিভিশন বেঞ্চের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Ganguly)। পর পর বেশ কয়েকটি ঘটনায় সিবিআই (CBI) তদন্তের নির্দেশও দেন তিনি। এ বার তাঁর এজলাসের ভিতরে-বাইরে আইনজীবীদের বিক্ষোভে তৈরি হল নজিরবিহীন উত্তেজনা।


বুধবার ১৭ নম্বর এজলাসের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের আইনজীবী সেলের একাংশের বিরুদ্ধে। শেষে বিক্ষোভ থামার পর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এজলাসে বলেন, "আমি দুর্নীতি দেখলে রুখে দাঁড়াব। মাথায় বন্দুক ঠেকালেও থামব না।" 


বিচারক অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে বয়কটের দাবি আইনজীবীর একাংশদের


এ দিন সকাল দশটা থেকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসের বাইরে জটলা করে দাঁড়িয়েছিলেন একদল আইনজীবী। অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন তৃণমূলের আইনজীবী সেলের একাংশ। সেই সময় এজলাসে ঢোকার চেষ্টা করেন বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি, আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল, অ্যাসিস্ট্যান্ট সলিসিটর জেনারেল বিল্বদল ভট্টাচার্য-সহ কয়েকজন আইনজীবী। অভিযোগ, তাঁদের বাধা দেন বিক্ষোভকারী আইনজীবীরা। 


যদিও,বিক্ষোভকারীদের পাল্টা দাবি, ওই আইনজীবীরা এজলাসে ঢোকার সময়, তাঁদের ধাক্কা দেন। সেই নিয়ে ১৭ নম্বর এজলাসের বাইরে তুমুল হই-হট্টগোল শুরু হয়। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এজলাসে আসার পরও গন্ডগোল থামেনি। শেষে বিচারপতি বলেন, "কেউ যদি আমার এজলালে শুনানিতে অংশ নিতে না চান, তাহলে আমার কোনও অসুবিধা নেই। যাঁদের এখানে মামলা নেই, তাঁরা দয়া করে এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যান।" তাতে বিক্ষোভকারী আইনজীবীরা এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন। অভিযোগ, বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি কল্লোল মণ্ডল-সহ কয়েকজন আইজীবী যখন এজলাস ছেড়ে বেরোচ্ছেন, অবস্থানরত আইজীবীদের একাংশ তাঁদের মারতে তেড়ে যান। কল্লোল মণ্ডল-সহ বাকিরা দৌড়ে প্রধান বিচারপতির এজলাসে গিয়ে আশ্রয় নেন। তাঁকে গোটা পরিস্থিতির কথা জানান। সঙ্গে সঙ্গে প্রধান বিচারপতি এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যান। তার পর নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠান বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণাভ ঘোষ, অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র-সহ আইনজীবীদের। সেখানে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হলেও কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। 


বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে দ্বিধা-বিভক্ত হাইকোর্টের আইনজীবীরা


কলকাতা হাইকোর্টে যদিও এই গন্ডগোল চলছে আগে থেকেই। মঙ্গলবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কটের প্রস্তাব পাস করাতে চান আইনজীবীদের একাংশ। বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণাভ ঘোষ-সহ কয়েক জন আইজীবী তাতে রাজি হননি। সেই নিয়ে দু’পক্ষের আইজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি বেধে যায়। শেষে বর্ষীয়ান আইনজীবী চণ্ডীচরণ দাসের নেতৃত্বে আইনজীবীদের একাংশ বৈঠক করেন। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একটি চিঠিতে সই করে প্রধান বিচারপতিকে দেওয়া হয়। এর পর এ দিনের বিক্ষোভ। পরিস্থিতি একটু শান্ত হওয়ার পর, এজলাসে শুনানির সময় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, আইনজীবী চণ্ডীচরণ দাসের উদ্দেশে বলেন, "চিঠিতে আপনার স্বাক্ষর দেখে আমার খারাপ লেগেছে। আপনারা রাজনীতি করছেন করুন, আমি করছি না। আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আদালতে বিচার করছি। কিছুদিন আগে অশোক দেবের সঙ্গে দেখা হল। আমরা চা খেলাম। তাঁকেও বলেছি, আপনি আমার বিরুদ্ধে যা বলছেন, সেটা মন থেকে মেনে নিতে পারছেন তো?" 


এর পর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আরও বলেন, "আমি দুর্নীতি দেখলে রুখে দাঁড়াবই। মাথায় বন্দুক ঠেকালেও থামব না। সব আমলেই দুর্নীতি হয়। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে আপনারা আমাকে সাহায্য করুন।" এই ঘটনায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "তৃণমূল আশ্রিত আইনজীবীরা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করেছেন ভয় ভীতির মাধ্যমে, যাতে সরকারের পক্ষে থাকতে বাধ্য হন বিচারকরা। চূড়ান্ত অরাজকতা চলছে। আইনেরর শাসন নেই।" বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের মূল ফটকের সামনেও আইনজীবীরা দলে দলে বিক্ষোভ দেখান।


আরও পড়ুন: Partha Chatterjee: এসএসসি দুর্নীতি মামলায় ডিভিশন বেঞ্চে ফের স্বস্তি পার্থর