ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, সন্দীপ সরকার, কলকাতা: আর জি কর মেডিক্য়াল কলজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্য়ক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য বেআইনিভাবে বিক্রির অভিযোগ উঠেছিল আগেই। সেই নিয়ে বিতর্কের আবহে এবার এবিপি আনন্দের অন্তর্তদন্তে উঠে এল বিস্ফোরক তথ্য়। জানা গেল, কলকাতার বুকে গোডাউন বানিয়ে রমরমিয়ে চলছে বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য পুনর্ব্য়বহারের চক্র। (RG Kar Medical Waste)
এর আগে, আর জি কর মেডিক্য়াল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের পর প্রাক্তন অধ্য়ক্ষ সন্দীপের বিরুদ্ধে বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য পাচারের অভিযোগ তোলেন হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। তাঁর বক্তব্য ছিল, "ওঁর বিরুদ্ধে অনেকগুলি দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। সবচেয়ে বাজে জিনিস যা ছিল, তা হল, একটি মেডিক্যাল কলেজের বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য পাচার। বেআইনি ভাবে পাচার করা হতো।" (RG Kar Case)
এই অভিযোগ ঘিরে বিতর্কের আবহেই এবার খোঁজ মিলল বর্জ্য পুনর্ব্য়বহারের গোডাউনের। বানতলার লালকুঠীরের গোডাউনটিকে বাইরে থেকে দেখতে আর পাঁচটা সাধারণ গোডাউনেরই মতো। গোডাউনের উপর আবার লাগানো রয়েছে জাতীয় পতাকাও। বাইরে থেকে তালাবন্ধ রয়েছে সেটি। কিন্তু ভিতরে চলছে কাজ। আর ভিতরে ঢুকলেই বোঝা যাবে, কেঁচে খুঁড়তে গিয়ে কেউটে বেরিয়ে পড়েছে। দিনের পর দিন বিপজ্জনক কারবার চলছে।
গোডাউনের বাইরে যেখানে প্লাস্টিক রাখা রয়েছে, ভিতরে রয়েছে বর্জ্য। পাকা বাড়ির আড়ালের চলছে বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের কাজ। গোডাউনের ভিতরে মজুত রয়েছে হাসপাতালে ব্য়বহার হওয়া সিরিঞ্জ, সূচ, গ্লাভস, অক্সিজেনের পাইপ, ক্যাথিটার, রক্তের নমুনা সংগ্রহের টিউব-সহ একাদিক বায়ো মেডিক্য়াল বর্জ্য়। তার পিছনে বর্জ্য ফেলার ব্যাগের পাহাড় জমে রয়েছে।
গোডাউনের কর্মচারীদের দাবি, গ্লুকোজের কারবার চলছে। তাঁরা জানান, এই গোডাউনের মালিক, শাহবুদ্দিন সর্দার নামে এক ব্য়ক্তি। কিন্তু প্রশ্ন হল, হাসপাতালের রোগীদের ব্য়াবহার করার পর যে সমস্ত জিনিস পরিবেশ বান্ধব প্রক্রিয়ায় নষ্ট করে দেওয়ার কথা, সেইসব এই গোডাউনে কী করছে?
এই কারবার সম্পর্কে কি টের পাননি স্থানীয় বাসিন্দারা?
স্থানীয়দের মধ্যে একজন জানান, এব্যাপারে কিছু জানতেন না তাঁরা। আর এক ব্যক্তি জানান, প্লাস্টিকের ব্যবসা বলেই জানতেন তাঁরা। আড়ালে এসব চলছে বলে জানা ছিল না। চিকিৎসকদের মতে এই ধরনের বায়ো মেডিক্য়াল বর্জ্য় থেকে HIV সংক্রমণের মতো মারাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে। চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, নীচুতলার কর্মী নয়, হাসপাতালের উপরের তলার কর্মীরা না থাকলে এই কাজ সম্ভব নয়।
আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাত বলেন, "আমরা এসবের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। মানুষের প্রাণ সংশয় হতে পারে। আমরা জানিও না কত মানুষ এভাবে মারা গিয়েছেন।" কিন্তু হাসপাতালের এই সমস্ত বায়ো মেডিক্য়াল বর্জ্য় এখানে এল কীভাবে? তবে কি হাসপতালর ভিতরেই রয়েছে এই চক্রের একটি অংশ? যে অভিযোগ তুলেছিলেন আখতার আলি, সেই একই ঘটনা কি ঘটছে আরও কোনও হাসপাতালে? তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, এই ধরনের কারবার যে চলছিল সেই তথ্য় কি ছিলা না পুলিশের কাছে? প্রশ্ন একাধিক।