নয়াদিল্লি: এক লোকসভা নির্বাচনের পর পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ। আর এক লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের মর্যাদার দাবিতে সরব। চার বছরের ব্যবধানে উত্তাল লাদাখ। রাজ্যের মর্যাদা চেয়ে সেখানে রাস্তায় নামলেন হাজার হাজার মানুষ, তার জেরে দোকানপাঠ, বাজারঘাট সব বন্ধ লাদাখে। সব ছেড়ে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। কনকনে ঠান্ডায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করছেন তাঁরা। (Ladakh Shutdown)


২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর, সে বছর অগাস্ট মাসে তদানীন্তন পূর্ণাঙ্গ রাজ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খর্ব করে, উপত্যকাকে ভেঙে দু’টুকরো করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর পর ৩১ অক্টোবর পৃথক জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখকে, দুই পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পরিস্থিতি বুঝে দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছিলেন কেন্দ্র। (Ladakh Shutdown)


তার পর থেকে বার বার দাবি জানিয়েও লাভ হয়নি, শুধু আশ্বাসবার্তা এসেছে বলে দাবি লাদাখের মানুষের। তাই প্রতিবাদে এবার রাস্তায় নামলেন তাঁরা। রাজ্যের মর্যাদা এবং ষষ্ঠ তফলিলে অন্তর্ভুক্তিকরণের মাধ্যমে সাংবিধানিক সুরক্ষা, এই দু’টি দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন লাদাখের মানুষজন। সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় উপজাতি অধ্যুষিত এলাকার জন্য বিশেষ বিধান, সুযোগ-সুবিধা থাকে, যার আওতায় সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ মেলে, জমির উপর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়, পৃথক পরিচিতিতে সিলমোহর পড়ে। বর্তমানে অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং মিজোরাম ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত। তাদের নিজেদের তিনটি করে উপজাতি পরিষদও রয়েছে।



আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: মমতার ধর্নামঞ্চে অনুপস্থিত অভিষেক, জল্পনা বাড়াল বোন অদিতির পোস্ট


ওই চার রাজ্যের সমকক্ষ হয়ে উঠতেই রাস্তায় নেমেছেন লাদাখের মানুষজন। ‘লেহ্ চলো’ স্লোগান তুলে এগিয়ে চলেছে প্রতিবাদ মিছিল। দুই নাগরিক সংগঠন লেহ্ অ্যাপেক্স বডি এবং কার্গিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়্যান্স প্রতিবাদ মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এর আগে, গত ৪ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সরকারের গঠিত বিশেষ কমিটির সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করে ওই দুই সংগঠন। সেখানে স্থানীয়দের জন্য সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ, লেহ্ এবং কার্গিলের জন্য পৃথক লোকসভা কেন্দ্রের দাবি জানানো হয়। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফার বৈঠক হওয়ার কথা। তার আগেই দলে দলে রাস্তায় নেমে এলেন স্থানীয় মানুষজন।


এত সংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমেছেন যে, শনিবার নুবরা ভ্যালির মরো প্রত্যন্ত এলাকাতেও দোকানপাট সব বন্ধ ছিল।যানবাহন রাস্তায় প্রায় নামেইনি। লেহ্-তে পোলো গ্রাউন্ডে শয়ে শয়ে মানুষ মিলে জমায়েত করেন। সরকারের কাছে দাবিদাওয়া পূরণের দাবি জানান। ম্যাগসেসে পুরস্কার বিজয়ী, লাদাখের শিক্ষাবিদ সোনম ওয়াংচুক বলেন, “অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহারের পর লাদাখকে ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু শুধু ঘোষণা করেই ক্ষান্ত হয় মোদি সরকার। তার পর থেকে মুখে কুলুপ এঁটে বসে রয়েছে। বরং যে বা যাঁরা দাবি জানাচ্ছেন, তাঁদের হেনস্থা করা হচ্চে। এমনকি খনির দখল পেতে লাদাখকে ধ্বংসের পরিকল্পনা চলছে। আনমরা শুধু নিজেদের সাংবিধানিক অধিকার চাইছি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত পিছু হটব না।”


জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মন্ত্রী শেরিং দোরজে বলেন, “অবরোধের মাধ্যমে সরকারকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে। লাদাখের মানুষের দাবি পূরণ করতে হবে কেন্দ্রকে। সংবিধান বহির্ভূত, বাড়তি কিছু দাবি করছি না আমরা। লাদাখের মানুষদের জন্য উপজাতির মর্যাদা একেবারে সঠিক। আমাদের দাবি মানতে হবে।” কার্গিলেও একই পরিস্থিতি। সেখানেও হাজার হাজার মানুষ পথে নেমেছেন।গত দু’বছরে এমন একাধিক প্রতিবাদ মিছিল বেরিয়েছে লাদাখে। কিন্তু দাবিদাওয়া পূরণ হয়নি আজও।