কলকাতা: আসছে 'আমপান'। ঝড়ের আগমন নিয়ে ত্রস্ত ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গের উপকূরবর্তী এলাকা। গত বছর মে মাসের শুরুতেই চলেছিল 'ফণী'র তাণ্ডব।
করোনা আতঙ্কের মধ্যেই ভারতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগে থাকে প্রায়ই। বন্যা, খরা, মেঘ-ভাঙা-বৃষ্টি, ভূমিকম্প। তবে ভারতে বিধ্বংসী ঝড়ের ইতিহাস রীতিমতো শিউরে ওঠার মতোই। মে-জুন, অক্টোবর-নভেম্বর, এই মাসগুলিতেই ভারতে ঝড় বেশ হয়ে থাকে। ভৌগলিক কারণেই আর তার ধাক্কা বেশিরভাগই গিয়ে পড়ে দেশের পূর্ব উপকূলে।

ভারতে কেন এত সাইক্লোন হয়?

ভারতে ৫টির মধ্যে ৪টি সাইক্লোনই হয় পূর্ব উপকূলবর্তী অঞ্চলে। ১৮৯১ থেকে ১৯৯০, এই ১০০ বছরে ২৬২ টি বড়সড় ঝড় সামলেছে পূর্ব উপকূল। সেখানে পশ্চিম পাড়ে হয়েছে ৩৩টি সাইক্লোন।
বহুর মধ্যে ভারতের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া ৯টি সাইক্লোনের কথা কোনওদিন ভোলা যাবে না।

ভারতে কোন কোন রাজ্য সব থেকে বেশি সাইক্লোন সামলায়?

এ দেশে ঝড়ে সবথেকে বেশি বিপর্যস্ত হয় অন্ধ্র প্রদেশ, ওড়িশা, তামিল নাডু ও পশ্চিমবঙ্গ। পদুচেরিও ঝড়ের মুখোমুখি হয় বারবার।

ভারতে কীভাবে সাইক্লোনের নামকরণ হয় জানেন?
সাইক্লোনের নাম শুধু ভারতের আবহাওয়া দফতর ঠিক করে না। ৮টি দেশের আবহাওয়া অফিসের ভাবনা-চিন্তা থেকে দেওয়া হয় ঝড়ের নাম।

এবার এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক ভারতের সবথেকে বিধ্বংসী ঝড়গুলির ইতিবৃত্ত

ফণী - ২০১৯

গতবছরই অতিশক্তশালী ঘূর্ণিঝড় ফণী তছনছ করে দিয়েছিল ওড়িশা উপকূল। বিপন্ন হয়েছিল স্বাভাবিক জনজীবন। বেশ কিছুদিন ওড়িশার বিভিন্ন জায়গা ছিল অগম্য, যোগাযোগের বাইরে। তাণ্ডবলীলা চলেছিল ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরেও। বন্ধ ছিল উড়ানও। ভারতীয় আবহাওয়া দফতর ফণীর শক্তি ও তাণ্ডবলীলা দেখে তাকে ক্যাটেগরি ৪ হারিকেনের পর্যায়ে রেখেছিল।

সাইক্লোন অক্ষি - ২০১৭

অক্ষি মূলত তাণ্ডব চালিয়েছিল পশ্চিম উপকূলে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কেরল, তামিলনাডু ও গুজরাত। ২৪৫ জনের প্রাণ গেছিল অক্ষির ধ্বংসলীলায়।

সাইক্লোন ভরদা ২০১৬

সাইক্লোন ভরদা মূলত দাপট দেখিয়েছিল আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জেই। তারপর তা পূর্ব উপকূলে ঢুকে তাণ্ডব চালায় চেন্নাই, বিশাখাপত্তনম, কাঞ্চিপুরমে। শীতকালীন এই ঝড়ে প্রায় ৩৮ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন।

সাইক্লোন হুদহুদ ২০১৪

হুদহুদ দাপটে বিপর্যস্ত হয়েছিল ভাইজ্যাগ। ওড়িশাতেও চলে হুদহুদের ধ্বংসলীলা। তছনছ হয়ে যায় শহর-গ্রাম। ১২৪ জনের মৃত্যু হয় এই ঘূর্ণিঝড়ে।

পিলিন - ২০১৩

১৯৯৯ ওড়িশা সুপারসাইক্লোনের পর এতবড় ঝড় আর এক দশকে হয়নি। ২০১৩ র অক্টোবরে এই ঝড় প্রভাব বিস্তার করেছিল মূলত থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়ায়। তারপর তা ভারত ভূখণ্ডেও ঢুকে পড়ে। এই ঝড়ে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়।

হেলেন -২০১৩

ফাইলিনের থেকে হেলেনের প্রাবল্য কম ছিল নিঃসন্দেহে। বঙ্গোপসাগরে ঘণীভূত এই ঘূর্ণিঝড় নভেম্বর মাসে আছড়ে পড়ে ভারতে। এতে ১১ জনের প্রাণ গেছিল।

সাইক্লোন নীলম - ২০১২

দক্ষিণ ভারতের সৈকত-শহর মহাবলীপুরম এই ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়। ঘণ্টায় ৮৫ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়েছিল এই ঝড়। হাওয়ার ধাক্কায় চেন্নাইয়ের মেরিনা বিচে বালির ঝড় ওঠে। ১০০ মিটার উঁচুতে ওঠে সমুদ্রের ঢেউ। ৭৫ জনের প্রাণ যায় ঝড়ের ধ্বংসলীলায়।

সাইক্লান ফিয়ান - ২০০৯

সাইক্লোন ফ্যান শ্রীলঙ্কা থেকে উৎপন্ন হয়ে তছনছ করেছিল দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গা। তামিল নাডুতে ভারী বৃষ্টি হয়েছিল। মহারাষ্ট্র, গুজরাতেও ভাল প্রভাব পড়ে। এই ঝড়ের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছিল ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে।

ওড়িশা সুপার সাইক্লোন ১৯৯৯

এই ঝড়ের প্রভাব বাকিগুলির থেকে সবথেকে বেশি ক্ষতিকর। আন্দামান সংলগ্ন সাগরে এই ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি। তারপর তা ধীরে ধীরে শক্তি বাড়িয়ে ওড়িশায় আছড়ে পড়ে ২৯ অক্টোবর। দুদিন ধরে প্রবল ধ্বংসলীলা চালায় ওই ঝড়। তারপর ভূমির উপ দিয়ে যেতে যেতে ও ক্রমাগত উষ্ণ বায়ুর সংস্পর্শে এসে শক্তি হারায় ঝড়।

এই ঝড়ের ধাক্কায় কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় জনজীবন। মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছায় ১৫ হাজারে। বহু মানুষ গৃহহারা হয়। তার সঙ্গে দেখা দেয় সংক্রামক অসুখের আশঙ্কা। ডায়রুিয়া কলেরায় আক্রান্ত হয় ঝড়ে বিপর্যস্ত মানুষ। ২২ হাজারেরও বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন, শুধুমাত্র ওড়িশাতেই।