নয়াদিল্লি: ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল নিয়ে রিপোর্ট পেশ হতেই হুলুস্থুল সংসদে। যৌথ সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট নিয়ে তীব্র আপত্তি বিরোধীদের। তাঁদের দাবি, ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল নিয়ে যে আপত্তি জানিয়েছিলেন তাঁরা, বিরোধিতায় যে যে যুক্তি দিয়েছিলেন, সেগুলি রিপোর্ট থেকে কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে।  সেই নিয়ে দিনভর টানাপোড়েনের পর, শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের বিরুদ্ধমত রিপোর্টে রাখতে রাজি হয় কেন্দ্র। (Waqf Amendment Bill Row)


বৃহস্পতিবার লোকসভা এবং রাজ্যসভায় ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ে। কিন্তু ওই রিপোর্ট থেকে তাদের মতামত বাদ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন বিরোধীরা। প্রথমে রাজ্যসভা তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়গে ওই রিপোর্টকে ‘ভুয়ো’, ‘অগণতান্ত্রিক’ আখ্যা দেন। বিরোধীদের মতামত বাদ দেওয়া নিয়ে তীব্র নিন্দা করেন সরকারের। চেয়ারপার্সন জগদীপ ধনখড়কে ওই রিপোর্ট খারিজ করতে আর্জি জানান। খড়গে বলেন, “বহু সাংসদ নিজেদের বিরুদ্ধমত জানিয়েছেন। তাঁদের মতামত বাদ দিয়ে, শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত তুলে ধরা নিন্দনীয় এবং অগণতান্ত্রিক।” তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব বলেন,"রিপোর্টের যে অংশে আপত্তি করা হয়েছে সেখানে সেন্সরশিপ চালিয়েছে সরকারপক্ষ।" বিরোধীদের বিক্ষোভের জেরে স্থগিত হয়ে যায় রাজ্যসভার অধিবেশন। (Indian Parliament)


লোকসভাতেও একই পরিস্থিতি দেখা দেয়। প্রথমে কেন্দ্র বিরোধীদের মতামত বাদ দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। পরে যদিও জানান, কমিটি মনে করলে বাদ দিতেই পারে। লোকসভায় এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যদিও জানান, বিরোধীদর মতামত রাখতে কোনও আপত্তি নেই কেন্দ্রের। স্পিকারকে সেই মতো এগোতে বলেন তিনি। এর পর জগদম্বিকা পাল রিপোর্ট পেশ করতে উঠলে স্লোগান দিতে শুরু করেন বিরোধীরা। ট্রেজারি বেঞ্চের দিকে টেবিল বাজাতে শুরু করেন। স্লোগান দিতে দিতে এর পর ওয়াকআউট করেন বিরোধীরা। সেই পরিস্থিতিতে শাহ বলেন, “বিরোধীদের কেউ কেউ বলছেন তাঁদের বিরুদ্ধমত রিপোর্টের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আমি নিজের দলের পক্ষ থেকে বলছি, সংসদীয় পদ্ধতিতে ঠিক মনে হলে ওঁদের বিরুদ্ধমত রিপোর্টে যুক্ত করতে পারেন।”


শেষ পর্যন্ত রিজিজুকে নিয়ে বিরোধী সাংসদদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। সেখানে দুই তরফে মীমাংসা সম্ভব হয়। শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের মতামত রিপোর্টের অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানায় কেন্দ্র।


এই পরিস্থিতিতর জন্য কেন্দ্রকেই দায়ী করেছেন কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ। তাঁর কথায় “৬৫৫ পাতার রিপোর্ট পড়তে একরাত সময় দেওয়া হয়েছিল। নিজেদের অপত্তি জানানোরও উপায় ছিল না আমাদের কাছে। বৈঠকের মিনিটস যদি দেখেন, বুঝতে পারবেন, প্রত্যেক পয়েন্ট ধরে ধরে আলোচনাই হয়নি। সংসদীয় যৌথ কমিটিতে আগেও সদস্য ছিলাম আমরা। পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এক্ষেত্রে আলোচনা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান কার নির্দেশে চলছেন? প্রতিবাদ জানাতেই ওয়াকআউট করি আমরা।”


AIMIM নেতা আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বলেন, "ওয়াকফ সংশোধনী বিল পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক। সংবিধানের ১৪. ১৫ এবং ২৯ ধারা লঙ্ঘন করে। ওয়াকফকে বাঁচানো নয়, ওয়াকফ ভেঙে দেওয়া, মুসলিমদের হাত থেকে সব কেড়ে নেওয়াই লক্ষ্য। আমরা এই বিলের তীব্র নিন্দা করি। স্পিকার আশ্বস্ত করেছেব যে ৭০ শতাংশ বিরুদ্ধমত রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।"