বিজেন্দ্র সিংহ, নয়াদিল্লি: মহাকুম্ভে যাওয়ার পথে বিপর্যয়। এবার নয়াদিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে ৩ শিশু ও ১১ জন মহিলা-সহ মৃত্যু হল ১৮ জনের। আহতের সংখ্যা কুড়িরও বেশি। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বারবার প্ল্যাটফর্ম বদলের ঘোষণা এবং ভিড় সত্ত্বেও টিকিট বিক্রি হওয়ায় এই দুর্ঘটনা। ট্রেন বাতিলের গুজবে হুড়োহুড়ি, দাবি বলে দাবি করলেও রেলের তরফে গড়া হয়েছে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি।


প্রথমে কুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা আর তারপরে নয়াদিল্লি স্টেশনের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকল গোটা দেশ। সাধারণ মানুষের জীবন যে কতটা সস্তা... তা এই দু'টো ছবিতেই তা স্পষ্ট। মহাকুম্ভে কোটি কোটি পুণ্যার্থীর সমাগম হবে, ভিড় উপচে পড়বে, এটা সবার জানা ছিল। কিন্তু সেই কুম্ভে যেতে গিয়েই এবার চলে গেল ১৮টা প্রাণ। মাত্র ১৭ দিনের ব্যবধানে ফের একটা বিপর্যয়। যা প্রাণ কাড়ল বহু মানুষের। 


মহাকুম্ভে পুণ্য অর্জনে যাওয়ার পথে শনিবার রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে, ১১ জন মহিলা ও তিনটি শিশু-সহ ১৮জনের। স্টেশনের ফুট ওভারব্রিজের সিঁড়িতে পড়ে থাকা ছেঁড়া ব্যাগ-চটি, ভাঙা চশমাই বলে দিচ্ছে, কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল শনিবার রাতে। নয়াদিল্লি স্টেশনের ১৪ আর ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝে এই ওভারব্রিজে কী রকম হুড়োহুড়ি হয়েছিল, তা এই ছবিতেই স্পষ্ট।


একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, 'আমিও পড়ে গেছিলাম। এখানে পড়ে যাই। কিন্তু, কোনও পুলিশ এখানে ছিল না। দুর্ঘটনার সময় একটাও পুলিশ এখানে ছিল না। এখন দেখুন কত্ত পুলিশ।' কিন্তু ঠিক কীভাবে ঘটেছিল বিপর্যয়? রাত ১০টা ১০ মিনিটে ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়ার কথা ছিল প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেসের। রাত ৯টা ৪০-এ নয়াদিল্লি স্টেশনে ঢোকে ট্রেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেসে ঠাসাঠাসি ভিড় ছিল। এর মধ্যেই কুম্ভ স্পেশাল ট্রেন ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে বলে ঘোষণা করা হয়। ফের বলা হয়, কুম্ভগামী স্পেশাল ট্রেন ছাড়বে ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে। এর ফলে ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের যাত্রীরা ১৬ নম্বরের দিকে যেতে চেষ্টা করে। ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের যাত্রীও ১৬ নম্বরের দিকে এগোতে শুরু করায় হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আগে থেকেই ভিড় ছিল কারণ স্বতন্ত্র সেনানী এক্সপ্রেস ও ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস লেটে চলছিল। 


ট্রেনযাত্রী একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, 'এত ভিড় ছিল যে, ট্রেনে উঠতেই পারিনি। আমরা মহিলারা ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করতে ট্রেনে উঠতে পারিনি।' প্রবল ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই মৃত্যু হয় বেশ কয়েকজনের। একজন মৃতের আত্মীয় বলছেন, 'আমার স্ত্রী ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। ধাক্কাধাক্কির মধ্যে যেই নীচে নেমেছি, একজনের ঘাড়ে আরেকজন...শ্বাস নেওয়া যাচ্ছিল না। পড়েও যায়নি...একজনের সঙ্গে গায়ে আরেকজন এমনভাবে আটকে গেছিল যে, তাতেই দমবন্ধ হয়ে মরে যায়।' কিন্তু, রবিবার সকালেও ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কুম্ভগামী ট্রেনে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ির ছবি।


ঘোষণার জেরে হুড়োহুড়ির কথা মানতে নারাজ রেল কর্তৃপক্ষ। নর্দার্ন রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক হিমাংশুশেখর উপাধ্যায় বলছেন, 'কোনও ট্রেন বাতিল হয়নি। কোনও ট্রেনের প্ল্যাটফর্মও বদল করা হয়নি। ওখানে আগে থেকেই ভিড় ছিল। সেই জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে।' রেলওয়ে বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে, যাত্রীদের অস্বাভাবিক ভিড় দেখে রেল কর্তৃপক্ষকে চারটি অতিরিক্ত স্পেশাল ট্রেন চালাতে বলা হয়েছিল। কেন এই বিপর্যয় ঘটল, তা জানতে দুই সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।


আরও পড়ুন: Babul Supriyo: প্রতিভাবান ছেলে মেয়েরা শো করছে, টাকা রোজগার করছে, কিন্তু গানের জগৎ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে: বাবুল সুপ্রিয়