কলকাতা: বাংলা (west bengal) ও বাঙালি হিন্দুদের ঘরের মেয়ে উমা। প্রতি বছর শরতে বাংলার কোনায় কোনায় পূজিতা হন দুর্গারূপী উমা। আর তাঁর হাত ধরেই বাংলার ভক্তদের মনের আসনে বিশেষ স্থান রয়েছে ভগবান শিবেরও (lord shiva)। যাঁরা শিবভক্ত, তাঁরা প্রত্যেকেই দ্বাদশ জ্য়োতিলির্ঙ্গের নাম শুনেছেন। কিন্তু সেগুলির কোনওটিই বাংলায় নেই। কিন্তু তা বলে এটা ভাবার কারণ নেই যে বাংলায় শিবপীঠ নেই। এই রাজ্যের নানা কোণেও একাধিক শিব পীঠ ছড়িয়ে রয়েছে। যেগুলির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একাধিক ইতিহাস। ভক্তরা বলে থাকেন, বাংলার শিবপীঠগুলিও জাগ্রত। সেখানে ভক্তিভরে পুজো দিলেও পূরণ হয় ভক্তদের মনকামনা। একবার দেখে নিন, আমাদের রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি শিবালয়।


Mahashivratri 2022: আসছে মহাশিবরাত্রি, আপনিও কি দেবাদিদেবের কৃপা পাবেন ?
 


তারকেশ্বর মন্দির: হুগলি জেলায় অবস্থিত তারকেশ্বর মন্দির (tarakeshwar shiv mandir)। সারা বাংলা, এমনকি অন্য রাজ্য থেকেও এখানে পুজো দিতে আসেন অসংখ্য ভক্ত। শ্রাবণ মাসে বাঁক কাঁধে নিয়ে পায়ে হেঁটে মন্দিরে যান ভক্তরা। বছরভর লেগেই থাকে ভিড়। কথিত রয়েছে  স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা এক জমিদার। মন্দিরের কাছেই রয়েছে একটি জলাশয়। দুধপুকুর বলে পরিচিত ওই পুকুর। কথিত রয়েছে সেখানে ডুব দিলে নাকি সব মনকামনা পূর্ণ হয়।  


নবকৈলাস মন্দির: অধুনা পূর্ব বর্ধমানের কালনায় অবস্থিত এই মন্দির। এটি কালনা ১০৮ শিবমন্দির (kalna shiv mandir) নামেও পরিচিত। ১০৮টি মন্দিরের প্রতিটিতেই রয়েছে শিবলিঙ্গ। সাদা ও কালো দুরকম শিবলিঙ্গের দেখা মেলে এখানে। ইতিহাস বলে বর্ধমানের রাজপরিবার মন্দিরগুলি তৈরি করেছিল। মন্দিরের গায়ে রয়েছে অসংখ্য কারুকাজ। ভক্তির সঙ্গে শিল্পের মিলনের অন্যতম নির্দশন এই শিবালয়। সামনেই মহাশিবরাত্রি। একবার ঘুরে আসতেই পারেন কালনা ১০৮ শিবমন্দিরে। পূর্ব বর্ধমানের নবাবহাটেই রয়েছে আরও একটি ১০৮টি শিবমন্দির। এটিও তৈরি করেছিল বর্ধমানের রাজ পরিবার। আয়তাকারে সাজানো রয়েছে ১০৮টি শিব মন্দির।   


ভূকৈলাস মন্দির: ঘিঞ্জি কলকাতা। সেখানেও রয়েছে এক অতিপ্রাচীন শিব মন্দির। কলকাতার খিদিরপুর এলাকায় ভূকৈলাস রোড। এককালে সেখানেই ছিল ভূকৈলাস জমিদারবাড়ি। তাদেরই তৈরি ভূকৈলাস মন্দির। এখানে ২টি শিবমন্দির রয়েছে। কষ্টিপাথরের উপর খোদাই করে তৈরি হয়েছে শিবলিঙ্গ। কথিত রয়েছে এটি নাকি ভারতবর্ষের উচ্চতম শিবলিঙ্গ। 


মহাকাল মন্দির: দার্জিলিং ম্যালের ঠিক পিছনে রয়েছে প্রাচীন এই শিবমন্দির।  মহাকাল মন্দির আদতে একটি পাহাড়ের উপর তৈরি। পাহাড়ের একটি সুড়ঙ্গের একটু ভিতরে রয়েছে শিবলিঙ্গ। অন্যদিকে মূল মন্দিরের সামনে রয়েছে শিবের বাহনের মূ্র্তি। মহাকাল মন্দিরে রয়েছে আরও দেবদেবীর মন্দির। এই মন্দিরে মিলেমিশে গিয়েছে ভগবান শিব এবং গৌতম বুদ্ধ। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী উভয়েই মহাকাল মন্দিরে (mahakal mandir) পুজো দেন।


জল্পেশ মন্দির: উত্তরবঙ্গের এই শিবালয় অত্যন্ত জনপ্রিয়। জল্পেশ মন্দির অত্যন্ত জাগ্রত বলেই মনে করেন শিবভক্তরা। জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়িতে অবস্থিত এই মন্দিরটি বহু প্রাচীন। ইতিহাস বলে কোচবিহার রাজপরিবার এই মন্দিরটি তৈরি করেছিল। শ্রাবণ মাসে বিশাল বড় করে মেলায় আয়োজন হয় এই মন্দির চত্বরে। যা শ্রাবণী মেলা বলে পরিচিত। মেলা ও পুজো ঘিরে কয়েকলক্ষ ভক্তের সমাগম হয় মন্দিরে।