নয়াদিল্লি: শপথগ্রহণের পরই ভারতকে সেনা প্রত্যাহার করতে বললেন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু। সরকারি বাবে দিল্লির কাছে সেনা প্রত্যাহারের আর্জি জানাল তাঁর দফতর। মলদ্বীপের সরকারি ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, সেনা প্রত্যাহার করে মলদ্বীপের সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক ইচ্ছেকে ভারত সরকার সম্মান জানাবে বলে আশাবাদী দেশের সরকার। এ নিয়ে প্রেসিডেন্টের দফতর আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করেছে। (Indian Troops in Maldives)


ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর সঙ্গে সাক্ষাতে ব্যক্তিগত ভাবেও এই অনুরোধ জানান মুইজ্জু। তাঁর শপথগ্রহণে উপস্থিত ছিলেন রিজিজু। সেখানে বিষয়টি নিয়ে কথা হয় দু'জনের মধ্যে। তার পর তার দফতর থেকে বিবৃতি জারি করা হয়। এই মুহূর্তে মলদ্বীপে ভারতীয় সেনার প্রায় ৭০ জওয়ান মোতায়েন রয়েছে। ভারতীয় যুদ্ধবিমান, রণতরীও সেদেশের ইকনমিক জোনে নজরদারি চালাচ্ছে। (Mohamed Muizzu)


মলদ্বীপেক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও, জরুরি পরিস্থিতিতে উদ্ধারকার্য চালানো, মাদকপাচার প্রতিরোধের দায়িত্ব এতদিন পালন করত সেখানে মোতায়েন ভারতীয় সেনা। মুইজ্জুর মসনদে বসা নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই সেনা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। দিল্লি সূত্রে খবর, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের ফাঁকেই রিজিজুর কাছে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি তুলে ধরেন মুইজ্জু। 


আরও পড়ুন: Elon Musk: তীব্র নিন্দা হোয়াইট হাউসের, বিজ্ঞাপন বন্ধ করল Apple, Disney, 'ইহুদিবিদ্বেষী' পোস্ট নিয়ে রোষে মাস্ক


সূত্রের খবর, এতদিন মলদ্বীপে ভারতীয় সেনা যে উদ্ধারকার্য চালিয়েছে, মলদ্বীপের মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে, বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তাপ্রদানে খামতি রাখেনি, তার জন্য দিল্লির প্রতি কৃতজ্ঞতাও ব্যক্ত করেছেন মুইজ্জু। কিন্তু সেনা প্রত্য়াহারের সিদ্ধান্তে অনড় তিনি। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে সমাধান সূত্র বের করার কথাও শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু সরকারি ভাবে এবার নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন মুইজ্জু।


ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই যদিও এ ব্যাপারে অনড় ছিলেন মুইজ্জু। দেশের মাটি থেকে বিদেশি সেনাকে উৎখাত করবেন বলে নির্বাচনী প্রচারের সময়ই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। নাম না করে তিনি বলেছিলেন, "মলদ্বীপে কোনও বিদেশি সেনা থাকতে দেওয়া যাবে না। আমাদের নিরাপত্তার কথাই যদি ওঠে, তাহলে এ ব্যাপারে লাল গণ্ডি এঁকে দেব আমি। অন্য দেশের গণ্ডিকেও সমান সম্মান জানাব।" শুক্রবার শপথগ্রহণের পর সবার আগে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের পথেই হাঁটলেন।


এমনিতে চিনপন্থী বলে পরিচিতি রয়েছে মুইজ্জুর। যদিও ভারতীয় সেনাকে হটিয়ে চিনা সেনাকে মোতায়েনের কোনও অভিসন্ধি তাঁর নেই বলে দাবি মুইজ্জুর। তাঁর বক্তব্য, "ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার অংশ হওয়ার ক্ষেত্রে মলদ্বীপ অত্য়ন্ত ক্ষুদ্র। মলদ্বীপের বিদেশনীতিকে এর সঙ্গে জড়াতে চাই না আমি।"


ভারত মহাসাগরের উপর অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্র মলদ্বীপ উপমহাদেশীয় ভূরাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। ভারত এবং চিন, দুই দেশই সেখানে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। মলদ্বীপের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টাও কম নেই। সেই আবহেই ভারতকে সেনা সরিয়ে নিতে আর্জি মুইজ্জুর, যা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূরাজনীতির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনীতিকরাষ 


মলদ্বীপে ভারতীয় সেনা মোতায়েনের কারণ জানতে হলে, সাড়ে তিন দশক আগে ফিরে যেতে হবে। মলদ্বীপে সেই সময় নির্বাচিত সরকারকে ফেলে অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করছিল- ভাড়াটে সশস্ত্র বাহিনী। সেই সময় মলদ্বীপে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতে হস্তক্ষেপ করে ভারত। তৎকালীন এক মন্ত্রীকেও পণবন্দি করে রাখা হয়েছিল। রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে ভারতীয় নৌবাহিনী। সেই সময় গোটা বিশ্ব ভারতের প্রশংসা করে। সময়ের সঙ্গে সেনার সংখ্যা কমিয়ে আনা হলেও, বরাবর ভারতীয় বাহিনীর মোতায়েন ছিল সেখানে। যখনই অস্থির হয়ে উঠেছে চারপাশ, যখনই বিপদ নেমে এসেছে, বরাবর মোকাবিলা করে এসেছে ভারতীয় সেনা। সেই সমীকরণই পাল্টে দিতে উদ্যোগী হলেন মুইজ্জু। তাঁর যুক্তি, ভারত-চিন, দুই দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার পক্ষপাতী তিনি।