British Indian of The Year: বিভিন্ন দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থানের উপর একটা বড় প্রভাব থাকে সেখানকার অভিবাসীদের। ব্রিটেনের প্রেক্ষাপটে ভারতীয় প্রবাসীদের ভূমিকা সেই দেশে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ঠিক কতটা তাই নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে গবেষণামূলক কাজ করছেন এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত, মণীশ তিওয়ারি। চলতি বছর ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অফ দ্য ইয়ার (২০২৪)- এর বিশেষ সম্মানও পেয়েছেন তিনি। 'হিয়ার অ্যান্ড নাউ ৩৬৫'- এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মণীশ তিওয়ারিকে এই সম্মান প্রদান করা হয়েছে বিকশিত ভারত ইনভেস্টমেন্ট সামিট অনুষ্ঠানে। এর আয়োজন ছিল ইন্দো-ইউরোপিয়ান বিজনেস ফোরাম (আইইবিএফ)। ব্রিটেনের অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি- এই সবকিছুর উপর প্রবাসী ভারতীয়দের কী কী প্রভাব রয়েছে, উন্নতির ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেই প্রসঙ্গেই গবেষণার কাজ করছেন মণীশ।
যেকোনও দেশের ক্ষেত্রে মাইগ্রেশন বা অভিবাসন সমস্যাজনক বলেই ধারণা রয়েছে আমজনতার। আমরা ধরেই নিই যে অভিবাসীরা একটি দেশের অর্থনীতি, সমাজ এবং রাজনৈতিক ভিত্তিতে চাপ তৈরি করেন। তবে এখানেই অনন্য মণীশের গবেষণা। ব্রিটেনের মাটিতে প্রবাসী ভারতীয়দের অবস্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝানোর পাশাপাশি ব্রিটেনের সমাজ এবং অর্থনীতির নিরিখে অভিবাসনের গুরুত্ব এবং প্রভাব ঠিক কতটা তা নিয়েও রিসার্চের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন মণীশ তিওয়ারি। তাঁর সাম্প্রতিক থিয়োরির নাম Shaping Economic Resilience, Cultural Dynamism, and Global Influence: Migration in the UK- যার অর্থ হল ব্রিটেনের অভিবাসন সেখানকার অর্থনীতিতে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে, সাংস্কৃতিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে এবং বিশ্বের উপর কেমন প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে পর্যালোচনা করা।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অফ দ্য ইয়ার- এর মতো সম্মান পেয়ে মণীশ বলেছেন, ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনের পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন ভারতীয় অভিবাসীরা। 'ব্রেক্সিট' হল আসলে ব্রিটেন এবং এক্সিট এই দুই শব্দ একত্রিত হয়ে তৈরি হওয়া এক শব্দবন্ধ। ইউরোপীয় ইউনিয়ান থেকে প্রত্যাহার করা নেওয়া হয়েছিল ব্রিটেন বা যুক্তরাজ্যকে। ২৩ জুন, ২০১৬ সালে গণভোটের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর ব্রেক্সিট আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্পন্ন হয় ৩১ জানুয়ারি, ২০২০ সালে। এই ব্রেক্সিট পরবর্তী সময় ব্রিটেনের স্বাস্থ্যক্ষেত্র, প্রযুক্তি এবং নয়া উদ্যোগ ক্ষেত্রগুলিকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছেন ভারতীয় অভিবাসীরা। এর পাশাপাশি ব্রিটেনের সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক পরিকাঠামোকেও সুদৃঢ় করতে সাহায্য করেছেন ভারতীয় অভিবাসীরাই। তার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান টিকিয়ে রাখা এবং বিশ্বের স্তরে এই দেশকে একটি প্রগতিশীল জাতি হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়েছে অভিবাসন প্রক্রিয়াই।
ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবায় ভারত থেকে আসা জুনিয়র ডাক্তারদের যে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে এবং তাঁদের ভূমিকা না থাকলে যে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়ত নিজের বক্তব্যে সেই উল্লেখও করেছেন মণীশ। বিশেষ করে ব্রেক্সিট এবং কোভিড পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং পরিষেবায় যে ভারতীয় পেশাদারদের নিযুক্ত করা হয়েছে, তাঁরাই ক্রমশ ব্রিটেনের অর্থনীতি এবং সমাজ-সংস্কৃতির পরিকাঠামোকে আরও সুদৃঢ় ভাবে গঠন করেছেন। মণীশ আরও বলেছেন যে ভারতীয় অভিবাসীরা যুক্তরাজ্যের সাংস্কৃতিক এবং ব্যাবসায়িক ক্ষেত্রের গঠন ক্রমাগত বদলে দিচ্ছে। মণীশের কথায় ব্রিটেনের সংস্কৃতি, সমাজ ও অর্থনীতির বিভিন্ন স্তরে ভারতীয় অভিবাসীদের অবদান ভারত এবং যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করছে। একেই বলে আন্তঃ-সাংস্কৃতিক ঐক্য। ভারতীয় অভিবাসীদের উদ্দেশে ব্রিটেনকে আরও একবার জগতের দরবারে শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার আহ্বানও জানিয়েছেন মণীশ।