নয়াদিল্লি: ঋতু পরিবর্তনের সময় রোগভোগের প্রকোপ দেখা দেয়। কিন্তু সাধারণ ফ্লু নয়, আমেরিকায় এই মুহূর্তে হামের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। একদশক পর আমেরিকায় হামের প্রত্যাবর্তন ঘটল। পশ্চিম টেক্সাসের গ্রামাঞ্চলে এই মুহূর্তে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র জানিয়েছেন, হামের প্রকোপকে এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। (Measles Outbreak in US)
হামের প্রকোপে পশ্চিম টেক্সাসে ইতিমধ্যেই এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আগে থেকে হামের টিকা নেওয়া ছিল না তার। ১২০ জনের বেশি মানুষ সেখানে হামে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৫ সালেউ শেষবার আমেরিকায় হামের দরুণ মৃত্যু ঘটে। (Measles Vaccine)
শুধু টেক্সাস নয়, নিউ মেক্সিকোতেও হামের সংক্রমণ বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে নয়জন সংক্রমিত হয়েছেন বলে খবর। তবে টেক্সাস থেকেই সেখানে রোগ ছড়াচ্ছে বলে কোনও সংযোগ পাওয়া যায়নি এখনও পর্যন্ত। অঙ্গরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে। লস অ্যাঞ্জেলস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও একজনের শরীরে হাম ধরা পড়ে।
হাম একটি ভাইরাল সংক্রমণ, বায়ুবাহিত এবং ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগে শরীরের উপর গুরুতর প্রভাব পড়ে, হতে পারে মৃত্যুও। সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে, তাঁর নিঃশ্বাস, কাশি এবং হাঁচির মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ায়। মেঝেয় ড্রপলেট থাকে যদি, তা ছুঁলেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন সংস্থা জানিয়েছে, হাম এতটাই বেশি ছোঁয়াচে যে সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে এক ঘরে থাকলেও আক্রান্ত হতে পারেন কেউ। এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তি বেরিয়ে যাওয়ার ঘণ্টা দুয়েক পর সেই ঘরে ঢুকলেও বিপদ হতে পারে। শিশুরা সহজেই আক্রান্ত হয়।
সংক্রমিত এক ব্যক্তির থেকে ১৫ জন হামে আক্রান্ত হতে পারেন। প্রথমে শ্বাসযন্ত্রকে কাবু করে হাম, তার পর ছড়িয়ে পড়ে শরীরের অন্যত্র। জ্বর, নাক দিয়ে জল পড়া, কাশি, চোখ লাল হওয়া, চোখ থেকে জল পড়া, শরীরে ব়্যাশ বেরনোর মতো উপসর্গ রয়েছে হামের। প্রথম তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যেই শরীরে ব়্যাশ বেরোয়। মুখে, ঘাড়ে, গলায়, হাতে, পায়ে, পায়ের পাতায় হাম হতে পারে। জ্বর হলে তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছে যায়।
হাম প্রতিরোধ করার নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা নেই পদ্ধতি নেই। উপসর্গগুলির উপশম, জটিলতা প্রতিরোধ এবং রোগীদের আরামকে মূলত গুরুত্ব দেন চিকিৎসকরা। একবার হলে, দ্বিতীয় বারও হাম হতে পারে। সাধারণত তেমন ভয়ঙ্কর না হলেও, হামে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হতে পারে। হাম থেকে কানেও সংক্রমণ ছড়ায়, হতে পারে ডায়রিয়া। আগে থেকে টিকা না নেওয়া থাকলে, গর্ভাবস্থায় হাম হলে, মায়েদের গর্ভে থাকা সন্তানের স্বাস্থ্যেও প্রভাব পড়তে পারে। শিশুরা হামে আক্রান্ত হলে প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজনের নিউমোনিয়া হয়। এনসেফালাইটাসে আক্রান্ত হয় ১০০০ জনে একজন।
হাম থেকে রক্ষা পেতে হলে অবশ্যই মামস এবং রুবেলা টিকা নিন, MMR Vaccine. ১২ থেকে ১৫ মাস বয়সে শিশুকে প্রথম টিকাটি দিন, দ্বিতীয় টিকা দিন ৪ থেকে ৬ বছর বয়সে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, করোনার পর থেকে হামের টিকার হার কমে গিয়েছে। ২০১৯ সালে আমেরিকায় হামের টিকা প্রাপ্ত শিশুর হার যেখানে ৯৫ শতাংশ ছিল, ২০২৩ সালে তা কমে ৯৩ শতাংশ হয়। আইডাহোর মতো কিছু অঙ্গরাজ্যে টিকার হার কমে ৮০ শতাংশেও নেমে এসেছে।