কেটে গিয়েছে ৫ টা দিন। মৃত্যুপুরী মায়ানমার থেকে উদ্ধার হচ্ছে একের পর এক দেহ। লাশ গুনতে গুনতে পৌঁছে গিয়েছে তিন হাজারের কাছাকাছি। এরই মধ্যে আবারও দুলে উঠেছে মায়ানমারের মাটি। ভয়াবহতা বাড়ছে। যখন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আর কারও প্রাণ থাকার আশা যখন ছেড়েই দিয়েছেন উদ্ধারকারীরা, তখনই বের হল আরও একটি দেহ, যার মধ্যে এখনও রয়েছে প্রাণ ! উদ্ধারকারী দল জানিয়েছে, বুধবার এক ব্যক্তিকে একটি হোটেলের ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তা দেখে আনন্দ আর বিষ্ময়ের সীমা নেই তাঁদের। এখনও পর্যন্ত ভূমিকম্পে ২,৭০০ জনের বেশি মানুষের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। সংখ্যাটা এখানেই থেমে থাকবে না বলেই মনে করছেন উদ্ধারকারীরা।


মায়ানমারের ক্ষমতায় থাকা সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে,  উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির বয়স ২৬ বছরের আসেপাশে।  মায়ানমার ও তুরস্কের উদ্ধারকারী দল একটি হোটেলের ধ্বংসাবশেষ থেকে  রাত ১২:৩০ টা নাগাদ  জীবিত উদ্ধার করে।


স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়েছে


মিয়ানমারে ৭.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়েছে। সোমবার মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৭০০। প্রায় ৩,৯০০ জন আহত ।  ২৭০ জন এখনও নিখোঁজ। হাসপাতালগুলি রোগীদের ভিড়ে থিক থিক করছে।   পরিস্থিতি এখন আরও খারাপ। জায়গা ও মেডিক্যাল ফেসিলিটির অভাব তো আছেই। তবে সীমিত সংখ্যক কর্মী তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছে, জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। 


স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে খবর,  গত চার বছর সামরিক শাসনে মায়ানমারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে। ভূমিকম্পের আগেও অনেক হাসপাতালের অবস্থা খারাপ ছিল, কিন্তু এখন পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। মান্দালয়ে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ, কারণ এখানকার ৮০ শতাংশের বেশি চিকিৎসা কর্মী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে। 


গত এক মাসে সাতটি বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে, কারণ তারা সরকারি হাসপাতালের পূর্বতন কর্মীদের চাকরিতে রেখে দিয়েছিল। ভূমিকম্পের আগেই অনেক বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, কারণ সামরিক সরকার তাদের কাজ করতে দিচ্ছিল না। এখন ভূমিকম্পের পর অবস্থা আরও ভয়াবহ। হাসপাতালগুলিও ধ্বংসপ্রায়।  চিকিৎসা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।


মান্দালয় জেনারেল হাসপাতালের অবস্থা ভূমিকম্পের পর অত্যন্ত ভয়াবহ । একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, "হাসপাতালে ঢুকতেই চারপাশে রক্তাক্ত অবস্থায় রোগী পড়ে রয়েছে। বেড ফাঁকা নেই। রোগীরা মাটিতেই পড়ে । চিকিৎসকের সংখ্যা কম থাকায় আহত মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে আছেন। 


এখন পর্যন্ত ৩৬টি আফটারশক
মায়ানমারে এখনও পর্যন্ত ৩৬টি আফটারশক হয়েছে।  এগুলো তীব্রতা ২.৮ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে ছিল। শুক্রবারও প্রথম ভূমিকম্পটি ছিল ৭.৭ মাত্রার। তারপরেরটি  ৬.৪ মাত্রার। এরপরই মায়ানমারের একাধিক এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।