নয়াদিল্লি: এমন ভারতই তো চাই যেখানে সংকীর্ণ ধর্মীয় গন্ডি পেরিয়ে খোলা মনে পরস্পর ভাব-ভালবাসা বিনিময় চলবে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, পার্সি, বৌদ্ধ, জৈন সম্প্রদায়ের। ঠিক এমনটাই করে দেখাচ্ছেন পূজা কুশওয়া। আগরার ১৮ বছরের হিন্দু মেয়েটি প্রতিদিন বিকালে সঞ্জয় নগর কলোনির এক মন্দিরে খোলা আকাশের তলায় কোরানের পাঠ দেন এলাকার মুসলিম বাচ্চাদের। তাঁর পড়ুয়ারা বেশিরভাগই গরিব ঘরের ছেলেমেয়ে। তাই কোনও পারিশ্রমিক নেন না পূজা।

১২ ক্লাসের ছাত্রী পূজা আরবি গুলে খেয়েছেন বলা যায়। আরবির জটিল, কঠিন শব্দ তাঁর ঠোঁটস্থ, হৃদয়স্থ তো বটেই। তাঁর পড়ানোয় মুগ্ধ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও। পূজার এক ছাত্রীর আপ্লুত মা বলেছেন, এত কম বয়সে এমন বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছে ও। এ সত্যিই এক চমত্কার, বিস্ময়। আমার বাচ্চার শিক্ষক হিসাবে ওকে পেয়ে দারুণ খুশি। শুধু আমি কেন, অন্য যে কোনও অভিভাবকের কাছেও ওর ধর্মীয় পরিচয়টা একেবারে তুচ্ছ ব্যাপার।

কী করে এত চমত্কার আরবি শিখলেন? পূজার জবাব, বহুদিন আগে আমাদের এলাকায় এক মহিলা ছিলেন, যিনি ভিন্ন ধর্মের বিশ্বাসের হাওয়ায় বড় হয়েছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন মুসলিম, মা হিন্দু। সেই সঙ্গীতা বেগম বাচ্চাদের কোরানের ক্লাস নিতেন। আমি পবিত্র কোরান সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠি। ওনার ক্লাসে যাওয়া শুরু করি। দ্রুত আমি শিক্ষালাভে এগিয়ে গিয়ে এক সময় বাকিদের ছাড়িয়ে যাই।

পূজা এও বলেছেন, ইসলামের একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেয়েছিলাম ওনার কাছে। সেটা হল, অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে না পারলে জ্ঞান অর্জনের কোনও সার্থকতা নেই।

পূজা শুরু করেছিলেন নিজের বাড়িতে। কিন্তু দিনদিন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় সেখানে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। এলাকার বয়স্করাই তাঁকে মন্দিরে ক্লাস নেওয়ার জায়গা করে দেন।

×