নয়াদিল্লি: শূন্যতার শোকের ঘনঘটাতেই এভাবে নতুনের জয়গান গাওয়া সম্ভব। সেটাই করে দেখালেন দিল্লির দুই বাসিন্দা। দিনকয়েক আগে বারান্দায় খেলার মাঝে নীচে পড়ে যায় তাদের ২০ মাসের শিশু। হাসপাতালে চিকিৎসকরা সবরকম চেষ্টা চরিত্র করার পর জানিয়ে দেন ব্রেন ডেড হয়ে গিয়েছে শিশুটির। কার্যত সব হারানোর যন্ত্রণার মাঝেও তাদের শিশুকে বাঁচিয়ে রাখতে অনন্য পথ বেছে নেন তার অভিভাবকরা। শিশুটির অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেন তারা। যার জেরে নতুন জীবনের খোঁজ পেয়েছেন পাঁচ পাঁচজন।

ভারতে অঙ্গদানের ইতিহাসে সবথেকে কমবয়সী হিসেবেও নথিভুক্ত হয়ে থাকল ২০ মাসের শিশুটির নাম। গত ৮ জানুয়ারি বাড়ির বারান্দাতে খেলার মাঝে রেলিং টপকে নীচে পড়ে গিয়েছিল শিশুটি। দিল্লির রোহিনীর ওই খুদেটিকে ভর্তি করা হয়েছিল শ্রী গঙ্গারাম হাসপাতালে। যেখানে গত ১১ জানুয়ারি চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন ব্রেন ডেড হয়ে গিয়েছে শিশুটির। যারপরই স্বাভাবিক কারণে প্রবল শোকে ডুবে যান শিশুটির অভিভাবকরা। কিন্তু তারপর যে রাস্তা তাঁরা বেছে নেন, তা দেখে মুগ্ধ সকলে।

ব্রেন ডেড হওয়া শিশুর অঙ্গ পেয়ে নতুন করে প্রাণ পেয়েছেন পাঁচ জন। যে খবর শুনে কিছুটা মানসিক শান্তি পেয়েছেন আশিস কুমার। খুদের বাবা আশিস বলেছেন, ‘চিকিৎসকরা যখন জানালেন মেয়ের ব্রেন ডেড হয়ে গিয়েছে এবং সেটা আর সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়, তখন যেন পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছিল আমাদের। কিন্তু হাসপাতালে মেয়ে থাকার সময়ই বেশ কিছু আরও অভিভাবকদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছিল, তারা প্রবল আশঙ্কিত ছিলেন তাদের শিশুদের বিভিন্ন অঙ্গের সমস্যা নিয়ে। যারপরই আমরা স্থির করি যদি আমাদের মেয়ের অঙ্গ পেয়ে ওরা সুস্থ হয়ে উঠতে পারে, তার থেকে আনন্দের আর কিছু হবে না। চিকিৎসকদের আমাদের পরিকল্পনা জানাতে তারাও উৎসাহ দেন। মেয়েকে নিজেদের হাতে কবর দিতে বা পুড়িয়ে দিতে পারতাম না, তাই আমরা স্থির করি, যদিও অন্যের মধ্যে আমাদের মেয়ে বেঁচে থাকে, সেটাই হবে সবথেকে আনন্দের।’

জানা গিয়েছে শিশুটির কিডনি দেওয়া হয়েছে এক প্রাপ্ত বয়স্ককে, লিভার ও হৃদযন্ত্র দেওয়া হয়েছে দুই খুদেকে আর কর্নিয়া আরও একজনকে। শ্রী গঙ্গারাম হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক ডিএস রাণা জানিয়েছেন, ‘শিশুটির পরিবার পবিত্র এক কাজ করেছে। যা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। আশা রাখি ওদের দেখানো পথে ভবিষ্যতে আরও অনেকে এগোবে। এদেশে গড়ে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ অঙ্গের সমস্যায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।‘