চণ্ডীগড় :  বাচ্চাদের ভুলিয়ে রাখতে অনেক সময়ই তার হাতে মোবাইল ফোবন তুলে দেন কোনও কোনও বাবা-মা। কিন্তু এর থেকে যে স্মার্টফোন-আসক্তি শিশুমনে গড়ে ওঠে তা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। এমনই ঘটনা ঘটল হরিয়ানায়। বাবা-মা স্মার্টফোন নিতে বাধা দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের হাত ছুরির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে তুলল নয় বছরের শিশু। চতুর্থ শ্রেণীর ওই পড়ুয়াকে জখম অবস্থায় দিল্লির একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের মনোবিজ ড. রাজীব মেহতার কাছে পাঠানো হয়।


কাউন্সেলিং পর্বে ওই শিশুটি জানিয়েছে, বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলো তার ভালো লাগে না। ফোনটাকেই সে সঙ্গী ভাবে।

শিশুটির মা অধ্যাপিকা, বাবা ব্যবসায়ী। একেবারে ছোটবেলায় মোবাইল ছেলের হাতে দিলে সহজেই খাওয়ানো যেত। সেজন্য বরাবর তাঁরা তাই-ই করতেন। মাত্র চার বছর বয়সে শিশুটিকে একটি হ্যান্ডসেট কিনে দেওয়া হয়। ছেলেটি সারাক্ষণ মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত থাকত। বাবা-মা ভাবতেন, বাইরে বেরিয়ে কুসঙ্গে পড়ার থেকে এটাই ভালো। এভাবে ধীরে ধীরে শিশুটির মধ্যে মোবাইল নির্ভরতা গড়ে ওঠে।

এরপর বাবা-মা লক্ষ্য করলেন, ফোন না পেলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে ছেলে। আনমনা হয়ে , বিমর্ষভাবে বসে থাকত সে।  ক্রমাগত মোবাইল ব্যবহার তার দৃষ্টিশক্তির ওপরও প্রভাব ফেলে। চক্ষু বিশেষজ্ঞ তার জন্য চশমারও বন্দোবস্ত করেন। তিনি শিশুটিতে ফোন, ল্যাপটপ, টেলিভিশনের স্ক্রিন থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয় বাবা-মাকে।

কিন্তু ফোন হাতে না পেলে মেজাজ খিঁচড়ে যেত শিশুটির। দেওয়ালে মাথাও ঠুকত। শেষপর্যন্ত একদিন ছুরি দিয়ে নিজের কব্জিতে কোপ বসায় সে।

চিকিত্সকরা বলছেন, মাদকাসক্তির থেকে কম কিছু নয় মোবাইল আসক্তি।

ড. মেহতা শিশুটিকে গ্যাজেট-মুক্ত পরিবেশ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। শিশুটির সঙ্গে আরও বেশি করে সময় কাটানোর পরামর্শও বাবা-মাকে দিয়েছেন তিনি। ড. মেহতা বলেছেন, বাবা-মার সঙ্গে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, বেড়ানো অন্যান্য সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ করে দিতে হবে শিশুটিকে। তিনি জানিয়েছেন, ছেলেটি ইতিমধ্যে টেবিল টেনিস খেলতে পছন্জ করছে। গান শুনতেও ভালো লাগে তার।