কলকাতা: প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সাড়ে তিন বছর সরকার চালিয়ে ফেলেছেন তিনি। বিজেপি নেতারা দাবি করছেন আচ্ছে দিন এসে গিয়েছে! কিন্তু, জনতা জনার্দন কী বলছে? এবিপি আনন্দ-লোকনীতি সিএসডিএস-এর সমীক্ষায় যা ইঙ্গিত মিলছে তা কিন্তু পদ্ম শিবিরের পক্ষে মোটেও সুখকর নয়!
সমীক্ষকদের প্রশ্ন ছিল আচ্ছে দিন কি এসেছে? হ্যাঁ বলেছেন ৪১ শতাংশ। কিন্তু, গতবছর মে মাসের সমীক্ষাতেই এই সংখ্যাটা ছিল ৬৩ শতাংশ।
অর্থাৎ, আচ্ছে দিনের বাস্তবায়নের সমর্থক ক্রমেই কমছে।
এবারের সমীক্ষায় ৫০ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা মনে করেন না আচ্ছে দিন এসেছে! অথচ গত মে মাসে এই সংখ্যাটা ছিল মাত্র ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ, এরকম মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে যাঁরা মনে করেন, এখনও আচ্ছে দিন আসেনি।
জিএসটি চালুর পর প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, এটা এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। যদিও এবিপি আনন্দ-লোকনীতি সিএসডিএস-এর সমীক্ষায় যে তথ্য উঠে এসেছে, তা কিন্তু বিজেপির মাথাব্যাথা বাড়াতে পারে।
সমীক্ষায় জিএসটি প্রসঙ্গে, দেশের সাতাশ শতাংশ মানুষ মনে করেন এটা সাবধানী পদক্ষেপ। আর ৪২ শতাংশের মতে খুব তাড়াহুড়ো করে জিএসটি চালু করেছে মোদী সরকার। তবে, দেশের ৪৮ শতাংশ মানুষ মনে করছে মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত সঠিক। ৩৪ শতাংশ বলছে খারাপ।
ফলস্বরূপ দেখা যাচ্ছে, নোটবাতিলের পর ২০১৭ সালের মে মাসে মোদীর জনপ্রিয়তা যেখানে ২০১৪-র থেকেও বেড়ে হয়েছিল ৪৪ শতাংশ, সেখানে জিএসটি চালু করার পর এখন জানুয়ারি মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭ শতাংশে।
কিন্তু, প্রশ্ন হল তাহলে কি ব্যবসায়ী সম্প্রদায় বিজেপির থেকে মুখ ফেরাচ্ছে? মোদী সরকারের পারফরম্যান্স নিয়ে কৃষকদের মত কী? এবিপি আনন্দ-সিএসডিএস-লোকনীতির সমীক্ষা অনুযায়ী, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে মোদী সরকারের জনপ্রিয়তা ক্রমেই কমছে।
২০১৮-র সমীক্ষা অনুযায়ী ৪০ শতাংশ কৃষক বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএকে সমর্থন করছে। যা ২০১৭-র সমীক্ষার তুলনায় ৯ শতাংশ কম। এখন করা সমীক্ষা অনুযায়ী ৪৩ শতাংশ ব্যবসায়ী বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএকে সমর্থন করছে। যা ২০১৭-র সমীক্ষার তুলনায় ৭ শতাংশ কম।
উল্টোদিকে কৃষক এবং ব্যবসায়ী উভয় মহলে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা বাড়ার ইঙ্গিত। এখন করা সমীক্ষা অনুযায়ী ৩৩ শতাংশ কৃষক কংগ্রেসকে সমর্থন করছে। যা ২০১৭-র সমীক্ষার তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি।
এখন করা সমীক্ষা অনুযায়ী ৩৪ শতাংশ ব্যবসায়ী কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএকে সমর্থন করছে। যা ২০১৭-র সমীক্ষার তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি।
সমীক্ষায় স্পষ্ট ইঙ্গিত, আট মাসের অন্তরে একই সংস্থার করা দু’টি সমীক্ষার ফল বলছে পশ্চিমবঙ্গে দ্রুত কমছে বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা। আর এটা শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে এই প্রবণতা।
এবিপি আনন্দ-সিএসডিএস-লোকনীতির যৌথ জনমত সমীক্ষায় ইঙ্গিত, গোটা দেশেই কমছে মোদী সরকারের জনপ্রিয়তা! ২০১৭ সালের মে মাসে মোদী সরকারের কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন ৬৪ শতাংশ মানুষ। অসন্তুষ্ট বলেছিলেন ২৭ শতাংশ, জানিনা বলেছিলেন ৯ শতাংশ। অথচ আট মাস পর, এখন সন্তুষ্টি কমে হয়েছে ৫১ শতাংশ। অসন্তুষ্টি বেড়ে হয়েছে ৪০ শতাংশ। জানিনা বলেছেন, ৯ শতাংশ।
শুধু এই নয়, ২০১৭-র সমীক্ষার তুলনায় এখন বিজেপি নেতৃত্বাধীন বড় রাজ্যগুলিতেও মোদী সরকারের জনপ্রিয়তা কমছে। ২০১৭-র সমীক্ষায় বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের ৭১ শতাংশ মানুষ বলেছিল তারা মোদী সরকারের কাজে সন্তুষ্ট। কিন্তু, এখন করা সমীক্ষা অনুযায়ী, সেই সংখ্যাটা কমে হয়েছে ৫৫ শতাংশ।
২০১৭-র সমীক্ষায় বিজেপি শাসিত গুজরাতের ৭২ শতাংশ বাসিন্দা মোদি সরকারের কাজে সন্তুষ্ট থাকলেও, আচ মাসের মধ্যে তা কমে হয়েছে ৫৭ শতাংশ। বিজেপি শাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ ২০১৭-য় বলেছিল তারা মোদী সরকারের কাজে সন্তুষ্ট। কিন্তু, এখন সেটা কমে হয়েছে ৫৪ শতাংশ।
বিজেপি শাসিত আরেক রাজ্য মহারাষ্ট্রেও মোদী সরকারের জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী। ২০১৭-র সমীক্ষায় পশ্চিমের এই বড় রাজ্যের ৬৩ শতাংশ মানুষ মোদী সরকারের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেছিল। এখন তা কমে হয়েছে ৫৬ শতাংশ।
২০১৭-র সমীক্ষায় বিজেপি শাসিত রাজস্থানের ৮৩ শতাংশ বাসিন্দা মোদী সরকারের কাজে সন্তুষ্ট ছিল।কিন্তু, এখন তা কমে হয়েছে ৫৯ শতাংশ।