লখনউ: যদু বংশে ঝড় উঠেছে। আর সেই ঝড়ের ধুলোয় তছনছ হয়ে যাচ্ছে গোবলয়ের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে মুলায়মের সাজানো রাজপাট।


কাকা-ভাইপোর যুযুধানে মনে করা হচ্ছে প্রথম রাউন্ডটা জিতেছেন ভাইপো, অখিলেশ যাদব। দলের সুপ্রিমো তথা বাবা মুলায়মের সমর্থনের জোরে কাকাতে মাত দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাতেই শিবপাল যাদব ইস্তফা দিয়েছেন রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে, ছেড়েছেন দলের যাবতীয় পদ। এমনকী মাত্র দুদিন আগে পাওয়া রাজ্য সভাপতির পদও ছেড়েছেন তিনি। তাঁরই সঙ্গে এসপির যাবতীয় সরকারি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী সরলা ও ছেলে আদিত্য। তবে তাঁর ইস্তফাপত্র গৃহীত হয়নি বলে খবর। শিবপাল বলেছেন, এসপি-তে ‘নেতাজি’ মুলায়মের কথাই শেষ কথা, দলের অনুগত সৈনিক হিসেবে তিনি ‘নেতাজি’-র নির্দেশ মেনে চলবেন।

কিন্তু সমস্যা যদি এতেই মিটত, তাহলে তো হয়েই যেত। শাসক দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে থমথম করছে রাজধানী লখনউ। দলের মধ্যে রীতিমত শক্তিশালী শিবপালের সমর্থকরা ভিড় করেছেন ৭, কালিদাস মার্গে, প্রাক্তন মন্ত্রী হিসেবে তাঁর সরকারি বাসভবনের বাইরে। ঘন ঘন উঠছে অখিলেশ বিরোধী স্লোগান। সমর্থকদের দাবি, এখনই শিবপালকে তাঁর আগের সব পদ ফিরিয়ে দিতে হবে। ভাইপো হিসেবে কাকার পা ছুঁয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে অখিলেশকে। বহু এসপি নেতাকে মিছিলে প্রকাশ্যে চোখের জল ফেলতে দেখা গিয়েছে, কেউ কেউ আবার হুমকি দিয়েছেন, দাবি না মিটলে আত্মাহুতি দেবেন। অন্তত ২৫জন বিক্ষুব্ধ এসপি নেতানেত্রী ইতিমধ্যেই দেখা করেছেন শিবপালের সঙ্গে। বৈঠক সেরেছেন অখিলেশ মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কৃত মন্ত্রী গায়ত্রী প্রজাপতিও।

শিবপালের বাসভবনের বাইরে তাঁর সমর্থকরা

শিবরাজ মুখে বলছেন, মুলায়মের কথা শুনে চলবেন। কিন্তু ইতিমধ্যেই মুলায়মের সঙ্গে দেখা করে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে এসেছেন, ভাইপোর হুকুমদারি মেনে তাঁর পক্ষে আর থাকা সম্ভব নয়, অখিলেশের সমান গুরুত্ব চাই তাঁর। দলে তাঁর রীতিমত প্রভাব থাকায় ভোটের বাজারে ভাইকে চটাতে চান না মুলায়মও। ওদিকে, ছেলে অখিলেশও অনড়। তাঁর স্পষ্ট কথা, দলকে আগামী ভোটে জেতাতে হলে তাঁকে কড়া প্রশাসক হতেই হবে। ভাই-ছেলের দড়ি টানাটানিতে এসপি-র ‘নেতাজি’-র এখন শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা।

তবে বাবা-কাকার ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে এসে ‘স্বাধীন’ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ অখিলেশ। মন্ত্রিসভার দু’নম্বর মুখ, কাকা শিবপালের হাত থেকে এক ঝটকায় তিন তিনটি মন্ত্রক কেড়ে নিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, কতটা ক্ষমতা ধরেন তিনি। কিন্তু নিজেক স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে দলকে গভীর দোটানায় ফেলেছেন মুলায়ম পুত্র। অখিলেশ-শিবপাল দ্বন্দ্বে এসপি প্রকাশ্যেই দুভাগ হয়ে গিয়েছে। রামগোপাল যাদবের মত বর্ষীয়াণ নেতারা অখিলেশের পাশে থাকলেও এসপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ অমর সিংহ রয়েছেন শিবপালের পাশে। কিন্তু শিবপালের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সেটাই এখন দেখার। এই পরিস্থিতিতে অখিলেশের সঙ্গে কোনওরকম বোঝাপড়ায় গেলে তা তাঁর পক্ষে রাজনৈতিক আত্মহত্যার সামিল হবে। আর ভোটের আগে যদি তিনি এসপি ভেঙে নিজস্ব দল গড়েন, তবে সমাজবাদী পার্টির হার কার্যত নিশ্চিত।