নয়াদিল্লি: হাত মেলাচ্ছেন মায়াবতী, অখিলেশ। সেই প্রক্রিয়া তলে তলে শুরু হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন অখিলেশের সমাজবাদী পার্টি (সপা)-র এক নেতা।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ও উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্যের ছেড়ে দেওয়া গোরক্ষপুর ও ফুলপুর সংসদীয় কেন্দ্রে ১১ মার্চ উপনির্বাচন। গত বছর ৪০৩ সদস্যবিশিষ্ট উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩০০-র বেশি আসন পায়। রাজনৈতিক মহলের জল্পনা রয়েছে, দুটি কেন্দ্রেই সহজে জিতে যেতে পারে বিজেপি। আর তার মধ্যেই রাজ্যের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আদিত্যনাথ, বিজেপিকে রুখতে হাত মেলানোর সম্ভাবনার খবর।
২০১৪-য় জাতীয় স্তরে বিজেপি-এনডিএ-র বিপুল জয়ের পর বিরোধী শিবিরের প্রথম পরীক্ষা হতে চলেছে গোরক্ষপুর, ফুলপুরের ভোট। ২০১৯এর সাধারণ নির্বাচনের আগে সপা ও বহুজন সমাজ পার্টি (বসপা)র সম্ভাব্য সমঝোতার ব্যাপারে অখিলেশের দলের মুখপাত্র পঙ্খুরি পাঠক ট্যুইটে বলেছেন, বিএসপি ফুলপুর, গোরক্ষপুরে লোকসভা উপনির্বাটনে সমাজবাদী পার্টিকে সমর্থন করছে। মায়াবতীজীর বহু প্রতীক্ষিত সিদ্ধান্ত। একসঙ্গে ভোটে লড়ার ও বৃহত্তর বহুজন ধর্মনিরপেক্ষ জোট তৈরির দিকে তাকিয়ে আছি।
এ ব্যাপারে সপা নেতা সুনীল সিংহ বলেন, আমি এটুকুই জানি যে বসপা উপনির্বাচনে লড়ছে না। যে দুই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেখানে বিজেপিকে হারাতে শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে সপা। শোনা যাচ্ছে, আজ রাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে সমঝোতার ঘোষণা করতে পারে দু দল।





পরে বসপা নেত্রী মায়াবতী জানান, শুধু আসন্ন উপনির্বাচন মাথায় রেখেই তাঁদের সপা-কে সমর্থনের সিদ্ধান্ত। বলেন, আমি পরিষ্কার করে দিতে চাই যে, বসপা কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট বাঁধেনি। ২০১৯-এর লোকসভা ভোট সামনে রেখে বসপা, সপা-র জোট হচ্ছে, এনিয়ে যাবতীয় জল্পনাই মিথ্যা, ভিত্তিহীন।
আাপাতত দু দলের বোঝাপড়া কেবলমাত্র সবচেয়ে শক্তিশালী অ-বিজেপি প্রার্থীর জয় সুনিশ্চিত করা পর্যন্তই যেতে পারে, তাই বসপা ফুলপুর, গোরক্ষপুর উপনির্বাচনে কোনও প্রার্থী দেয়নি বলে জানিয়ে মায়াবতী বলেন, আমরা সপার সঙ্গে কথা বলেছি, ঠিক হয়েছে, ওদের লোকসভা প্রার্থীদের সমর্থন করব, পাল্টা ওরা আমাদের রাজ্যসভা ভোটের প্রার্থীকে সমর্থন করবে।
রাজ্যসভা ভোটের ইস্যুতে নিজের অবস্থান জানাতে গিয়ে মায়াবতী বলেন, এখন আমাদের রাজ্যসভার জন্য যথেষ্ট শক্তি নেই। তবে সপা আমাদের সমর্থন দিলে আমরাও এমএলসি নির্বাচনে ওদের প্রার্থীদের সমর্থন করব। কংগ্রেস সম্পর্কে আমার অবস্থান হল, রাজ্যসভা ভোটে ওরা আমাদের সমর্থন পেতে চাইলে ওদেরও উত্তরপ্রদেশে আমাদের প্রার্থীকে সমর্থন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, বসপা নেত্রী বিজেপি ও সভার চেয়ারম্যান তাঁকে উত্তরপ্রদেশে দলিত-বিরোধী হিংসার ইস্যু তুলতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করে রাজ্যসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন।

১৯৯৩ সালে বিজেপির উত্থান ঠেকাতে একসঙ্গে ভোটে লড়েছিল বসপা, সপা। নতুন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন মুলায়ম সিংহ যাদব। কিন্তু দুপক্ষের সম্পর্ক তিক্ত হতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত দু বছর যেতে না যেতেই সমর্থন তুলে নেয় বসপা। ১৯৯৫-এ বিজেপির সমর্থনে সরকার গড়েন মায়াবতী।
২০১৭র বিধানসভা ভোটে বসপার শক্তি কমে মাত্র ১৯-এ দাঁড়িয়েছে। তারা এই উপনির্বাচনে লড়ছে না। কোনও প্রার্থীকেই সরকারি ভাবে সমর্থনের কথা জানায়নি তারা এখনও। সপা, কংগ্রেস গত বিধানসভা ভোটে জোট করে লড়ে সাফল্য না পেয়ে আলাদা হয়ে গিয়েছে। আসন্ন উপনির্বাচনে দু দলই প্রার্থী দিয়েছে।
আদিত্যনাথ টানা ৫ বার গোরক্ষপুর লোকসভা কেন্দ্রে জিতেছেন। গত তিনটি ভোটে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পান তিনি। উপনির্বাচনেও তিনিই বিজেপির মুখ। বিজেপি প্রার্থী উপেন্দ্র শুক্লার হয়ে জোর প্রচার করছেন তিনি।

সপা গোরক্ষপুরে প্রার্থী করেছে নিশাদ পার্টির প্রবীন কুমার নিশাদকে। ওখানে নিশাদ সম্প্রদায়ের ভাল ভোট আছে। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার নিশাদের আশা, মায়াবতী তাঁকে ভোট দেওয়ার ডাক দেবেন। বসপা আমাদের সমর্থন করলে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে সুবিধা হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বসপার গোরক্ষপুরের ইনচার্জ ঘনশ্যাম চন্দ্র খাওয়ায় সপা প্রার্থীকে সমর্থনের ঘোষণা করেছেন।