নয়াদিল্লি: মহম্মদ আলি জিন্নার ছবি থাকা ঘিরে বিতর্কের মধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করলেন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তারিক মনসুর। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত ইস্যুগুলি নিয়ে কথা বলতেই রাজনাথের কাছে যান তিনি। ওয়াকিবহাল সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে মনসুরকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন রাজনাথ।
যদিও আলোচনা সেরে বেরিয়ে মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, রাজনাথের সঙ্গে তাঁর বৈঠক অনেক আগে থেকেই ঠিক ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান বিতর্কের সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসের মতো কেন্দ্রীয় পরিষেবায় পড়ুয়াদের রিক্রুট করার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসারদের পাঠাতে স্বরাষ্টমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি।



এএমইউয়ের ছাত্র সংসদের কার্য্যালয়ের দেওয়ালে পাকিস্তানের স্থপতির ছবিটি ১৯৩৮ সাল থেকে রয়েছে, ফলে এটা কোনও ইস্যু নয় বলেও অভিমত জানান তিনি। স্থানীয় বিজেপি এম পি সতীশ গৌতম তাঁকে চিঠি লিখে জিন্নার ছবি নিয়ে আপত্তি তোলেন, সেটি ওখানে কেন রয়েছে, তাও জানতে চান, যা থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। ক্যাম্পাসে পরবর্তী হিংসার ব্যাপারে দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাও ১২ মে পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে।

জিন্নার ছবিতে আপত্তি তুলে ক্যাম্পাসে ঢুকে স্লোগান দেওয়া দক্ষিণপন্থী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আন্দোলনরত এএমইউ পড়ুয়াদের সঙ্গে গত ২ মে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। তারপর থেকে অনির্দিষ্টকালের ধরনায় বসেছেন একাধিক পড়ুয়া। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে, যেভাবে বিজেপি এমপির জিন্নার ছবিতে আপত্তির জেরে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে, তার বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়েছেন তাঁরা।
গতকাল উপাচার্য এক খোলা চিঠিতে অবস্থানরত পড়ুয়াদের ক্লাসে ফিরে পড়াশোনায় মন দেওয়ার আবেদন করেন। চিঠিতে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে কিছু শক্তি। ওদের ফাঁদে পা দিও না। তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে ওরা।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই প্রতিবাদী ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সিনিয়র ফ্যাকাল্টি সদস্যদের একটি ১৬ সদস্যের সমন্বয় কমিটি তৈরি করেছে।

এদিকে আলিগড়ের ডিএম চন্দ্রভূষণ সিংহ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ২ থেকে ৮ মে পর্যন্ত এএমইউ ক্যাম্পাসে ঘটা যাবতীয় গুন্ডামি, হিংসায় জড়িত সবাইকে চলতি ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের কঠোর, দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, গোটা অশান্তিতে সক্রিয় ভূমিকা ছিল যাদের, তাদের শনাক্ত করতে কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করেছে ভিডিওতে তোলা ছবি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের দাবি, ক্যাম্পাসে ঢুকে গন্ডগোল করা হিন্দু যুব বাহিনীর লোকজনকে আটক করেও ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
জেলা কর্তৃপক্ষের মত, যারা গুন্ডামি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর ধারায় মামলা দায়ের হওয়া সুনিশ্চিত করা হবে যাতে ভবিষ্যতে প্রত্যেকে হিংসা থেকে বিরত থাকে।
এদিকে এসএসপি অজয় কুমার বলেছেন, ধরনা চলাকালে নরেন্দ্র মোদীকে টার্গেট করে ভাষণ দিয়েছেন এএমইউ ছাত্র সংসদের নেতারা। সেখানকার আন্দোলনের পিছনে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকার পরিষ্কার ইঙ্গিত রয়েছে।