নয়াদিল্লি: 'সংগঠিত লুঠ', 'পাহাড়প্রমাণ বিপর্যয়' বলে দাবি করে নোট বাতিলের সমালোচনার পর গুজরাতের রাজকোটে নির্বাচনী জনসভায় নরেন্দ্র মোদীকে এমন ভুল এড়ানোর পরামর্শ দিলেন মনমোহন সিংহ। এ ধরনের মহাভুল ভবিষ্যতে আর করা উচিত নয় আমাদের, বলেন তিনি। বিমুদ্রাকরণের মাধ্যমে প্রচুর কালো টাকা সাদা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। নোট বাতিলের ধাক্কায় প্রচুর চাকরি নষ্ট হয়েছে, নতুন কর্মসংস্থান হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। নোট বাতিলের পদক্ষেপকে বিপর্যয় আখ্যা দিয়ে মনমোহনের দাবি, তাঁর আমলে সরকারের কোনও সিদ্ধান্ত গরিবকে আঘাত করেনি।
ইউপিএ সরকারের দশ বছরের শাসনে অর্জিত আর্থিক বৃদ্ধির গড় কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ছুঁতে পারবে না বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন, তাহলে কেন্দ্রকে পঞ্চম বর্ষে ১০.৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। এটা বাস্তবে হলে খুশিই হব। কিন্তু হবে বলে মনে হচ্ছে না, এটা রাখঢাক না রেখেই বলছি। মোদী সরকার দুর্নীতি দমনে ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ তুলে মনমোহন বলেন, ইউপিএ আমলে দুর্নীতি মামলায় কঠোর হাতে মোকাবিলা করা হত অভিযুক্তদের, কিন্তু এটা বিজেপি সম্পর্কে বলা যায় না।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, যেসব বিষয়ে নানা মহলে উদ্বেগ ছড়িয়েছে, সেগুলি নিয়ে শিক্ষক, অধ্যাপক, বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে মতামত বিনিময়ের জন্য রাজকোট এসেছেন পূর্বতন ইউপিএ জমানার প্রধানমন্ত্রী।
বিমুদ্রাকরণ পর্বে আমজনতাকে যে কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল, তার উল্লেখ করে চলতি মাসের গোড়ায়ও তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে সরকারি স্কিম নিয়ে আক্রমণ করেন। বলেন, নোট বাতিলের ফলে ব্যাঙ্ক, এটিএমের বাইরে লাইনে দাঁড়ানো যে শতাধিক মানুষ মারা গেলেন, তাঁদের কথা মনে পড়ছে। গভীর ব্যথা, যন্ত্রনা ও দায় নিয়ে বলছি, ৮নভেম্বর আমাদের অর্থনীতি, গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি কালো দিন। এও বলেন, জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার ৬.৩ শতাংশ হলেও তা আর্থিক মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত বলে এখনই ধরা ঠিক নয় কেননা ক্ষুদ্র ও মাঝারি সেক্টরকে হিসাবের মধ্যে রাখা হয়নি। বিমুদ্রাকরণ ও তড়িঘড়ি চালু করা জিএসটি বিরাট ধাক্কা দিয়েছে দুটি সেক্টরকেই। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এও বলেন, মোদী গুজরাত, গরিবদের 'অন্য যে কারও থেকে বেশি' ভাল বোঝেন বলে দাবি করেন, তবে কী করে এটা হয় যে, 'তাঁর সিদ্ধান্তগুলি যে যন্ত্রণা বয়ে এনেছে, তা কোনওদিনই উনি বুঝতেই পারেননি?'

মোদী নর্মদা ইস্যুতে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে মনে করতে পারছেন না বলে জানিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর দাবি, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে উনি যখনই চেয়েছেন, আমি ফেরাইনি, কেননা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করা আমার দায়িত্ব বলে মনে করেছি।
মনমোহন কেন্দ্রের বিদেশনীতিরও সমালোচনা করে বলেন, আমাদের জাতীয় স্বার্থ বর্তমান সরকারের খাপছাড়া বিদেশনীতির জন্য মার খেয়েছে, ওদের কিছু পদক্ষেপ দেশের পক্ষে ভাল নয়।