রায়পুর: এ যেন ভিলেনের হিরো হয়ে ওঠা! এ যেন কোনও গল্পগাথা।


এ-ও এক তিন কন্যার কাহিনী। তবে, ভাগ্যের পাকচক্রে এঁরা তিনজনই সমাজের অন্য মেরুতে পৌঁছে গিয়েছিলেন। সেখানে যখন জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠল, এঁরা একসঙ্গেই ফিরে এলেন মূলস্রোতে। শুধু ফিরেই এলেন না, অন্যদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠলেন।

কোসি, ফুলো মর্কম এবং কবিতা কাশ্যপ—তিনজনই ছত্তিশগড়ের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনজনই ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গ্রুপ (ডিআরজি)-র অ্যাসিস্টেন্ট কনস্টেবল পদে কর্মরতা।

হাতে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে এঁরা সকলেই পুরুষদের পাশাপাশি মাওবাদী-দমন অভিযানে নেমেছেন। দিনের পর দিন লড়াই চালাচ্ছেন মাওবাদীদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, বস্তারে গতকালই এঁরা দুই মাওবাদীকে খতম করেছেন।

কিন্তু, কয়েক বছর আগে এই চিত্রটা একেবারে অন্যরকম ছিল। তখনও কোসি, ফুলো এবং কবিতার হাতে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ছিল। তখনও তাঁরা পুরুষ ক্যাডারের পাশাপাশি লড়াই করতেন।

কিন্তু, ‘বিপক্ষের’ হয়ে। এই তিন কন্যা সেইসময় সক্রিয় মাওবাদী ছিলেন। এই বস্তারেই নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় এরাও সামিল ছিলেন।

তবে, মাও-ভাবধারা থেকে অতিষ্ট হয়ে এঁরা তিনজন সমাজের মূলস্রোতে ফেরার ইচ্ছা নিয়ে গতবছর আত্মসমর্পণ করেন। এঁদের তীব্র ইচ্ছেকে সম্মান দিয়ে প্রশাসন এই তিনজনকেই নতুন ভাবে লড়াই করার জন্য অনুপ্রাণিত করে।

আত্মসমর্পণের পর এই তিনজনের রাজ্য পুলিশে চাকরি মেলে। অস্ত্র প্রশিক্ষণ থাকায় এঁদের সশস্ত্র বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এঁরা যোগ দেন ডিআরজি-তে। কবিতা জানান, যখন মাওবাদী ছিলেন, তখন মনের মধ্যে একটা অপরাধবোধ ছিল, যা এখন নেই।

প্রসঙ্গত, ডিআরজি গঠন করার হয় আত্মসমর্পণ করা মাওবাদীদের থেকে বাছাই করে। লক্ষ্য দুটি। এক, স্থানীয় যুবাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং দুই, মাওবাদী দমন অভিযানে শত্রুদের চেয়ে এককদম এগিয়ে থাকা।

গতকাল বস্তারের বুরগাম থানার অন্তর্গত স্যাঙ্গুয়েল জঙ্গলে যৌথবাহিনীর সঙ্গে এনকাউন্টারে ২ মাওবাদী খতম হয়। অভিযানে অংশ নেয় ডিআরজি, ছত্তিশগড় সশস্ত্র পুলিশ এবং জেলা পুলিশ। সেই দলে ছিলেন এই তিন কন্যাও।

বস্তার ডিভিশনের পুলিশ সুপার আর এন দাস জানান, মাওবাদী সংগঠনে যদি পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারা সমানভাবে লড়তে পারে, তাহলে নিরাপত্তাবাহিনীতে পারবে না কেন।

তিনি যোগ করেন, এই তিনজন বিশেষ কম্যান্ডো প্রশিক্ষণ নিয়েছে। বাহিনীতে মহিলাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই, উল্টে দলে মহিলা থাকলে এধরনের অভিযানে আরও সুবিধে হয় বলে দাবি পুলিশের। সুপারের মতে, মহিলারা সহজেই গ্রামবাসীদের কাছে পৌঁছে যেতে পারেন। ফলে, খবরাখবর পেতে সুবিধে হয়।

শুধু তাই নয়। প্রাক্তন মাওবাদী হওয়ার দরুন, এঁরা সকলেই মাওবাদীদের চালচলন, জঙ্গলে গতিবিধি, কৌশল, অভ্যাস—সবকিছুই নখদর্পনে থাকে। যা বাহিনীকে এক কদম এগিয়ে রাখতে সাহায্য করে।

এসপি যোগ করেন, শুধু এই তিনজন নন, প্রায় ডজন খানেক মহিলা একইভাবে মাও-দমন অভিযানে নেমেছে। তিনি জানান, অন্যান্য জায়গাতেও একইভাবে মহিলা কম্যান্ডোরা মোতায়েন রয়েছে, যাঁদের অধিকাংশই প্রাক্তন মাওবাদী!

এঁদের মধ্যে কোসি বিয়ে করে এখন সুখী দাম্পত্য জীবনও কাটাচ্ছেন। কোসি, ফুলো এবং কবিতারা প্রমাণ করলেন গল্পও সত্যি হয়!