নয়াদিল্লি: তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে অবিলম্বে গ্রেফতার সংক্রান্ত আইনের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দলিত সংগঠনগুলির ডাকে আজ চলছে ভারত বনধ।  দলিতদের দাবি, এতে তফশিলি জাতি ও উপজাতিআইন শিথিল হয়েছে। এর প্রতিবাদে ডাকা ভারত বনধে  দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে উত্তর ভারতে বিক্ষোভ, অশান্তি ছড়িয়েছে। মধ্যপ্রদেশের গ্বালিয়রে বিক্ষোভ চলাকালীন প্রকাশ্যে গুলি চালাতে দেখা গিয়েছে এক ব্যক্তিকে।  এখনও পর্যন্ত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে।  এরমধ্যে মধ্যপ্রদেশেই মারা গিয়েছেন পাঁচজন। জখম অন্তত ১৯ জন।   তাঁদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশ কর্মীও।   মধ্যপ্রদেশের পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে।   পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্যের তিন জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। তলব করা হয়েছে সেনা সহ নিরাপত্তা বাহিনী।



দিল্লি, পঞ্জাব, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার সহ বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভ ও অশান্তি। ওড়িশার সম্বলপুর, বিহারের আরা, পঞ্জাবের পাতিয়ালা সহ বিভিন্ন জায়গায় রেল অবরোধ করা হয়। ফলে আটকে পড়ে বেশ কয়েকটি ট্রেন। গোলমালের আশঙ্কায় পঞ্জাব সরকার আজ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছে। মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে আজ পঞ্জাবে সিবিএসই দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। পঞ্জাবে গোলমাল বাড়ার আশঙ্কায় সেনাবাহিনীকেও তৈরি রাখা হয়েছে।

উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

পঞ্জাব, রাজস্থান, বিহার ও মধ্যপ্রদেশ সহ কয়েকটি রাজ্যে বিক্ষোভকারীরা  রেল ও সড়ক অবরোধ করে এবং বিভিন্ন স্থানে সরকারি সম্পত্তিতে ভাঙুচুরেরও খবর পাওয়া গিয়েছে। রাজস্থানের আলোয়ারে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বিহারে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে, ওই শিশু পথ অবরোধে আটকে পড়ে। হাজিপুরের  মেহনার হাসপাতাল থেকে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

আজ সকাল থেকে রাজস্থানের জয়পুর, বারমের, দিল্লির মান্ডি হাউস, উত্তরপ্রদেশের মেরঠ, মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় বিক্ষোভ। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বচসা, ধস্তাধস্তি হয়। বারমেরে বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। মেরঠে কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। বিহারের পটনা সহ আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করেন ভীম আর্মির সদস্যরা। তাঁরা জোর করে বহু দোকানও বন্ধ করে দেন।

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন, ‘তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের কল্যাণের বিষয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার দায়বদ্ধ। আমি সবাইকে আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত না করার আর্জি জানাচ্ছি। যদি আপনাদের কোনও সমস্যা থাকে, সে বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করুন।’

গত ২০ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট বলে, সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের উপর অত্যাচার বন্ধের আইনের যথেচ্ছ অপব্যবহার করা হচ্ছে। তাই এখন থেকে আর নিয়োগ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এই আইনে কোনও সরকারি কর্মীকে গ্রেফতার করা যাবে না। সরকারি কর্মী ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে সিনিয়র পুলিশ সুপার মনে করলে গ্রেফতারের অনুমতি দিতে পারেন। এই রায়ের বিরোধিতা করেই ভারত বনধের ডাক দিয়েছে পিস্যান্টস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি, ভারিপ বহুজন মহাসঙ্ঘ, সিটু, জাতি অন্ত সংঘর্ষ সমিতি, রাষ্ট্রীয় সেবা দল, ন্যাশনাল দলিত মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সহ বিভিন্ন সংগঠন।

অন্যদিকে, আজই এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাবে কেন্দ্রীয় সরকার। সামাজিক ন্যায়বিধান ও ক্ষমতায়ন বিভাগের মন্ত্রী থবর চন্দ গেহলট ভারত বনধ প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘ভারত বনধের প্রয়োজন কী? সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাচ্ছে।’ অপর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানও ভারত বনধের বিরোধিতা করেছেন।