নয়াদিল্লি: তাৎক্ষনিক তিন তালাক বেআইনি, ফৌজদারি অপরাধের তকমা দিতে তৈরি বিলটি আইনে পরিণত করতে বৃহস্পতিবার লোকসভায় পেশ করলেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। আরজেডি, এআইএমআইএম, বিজেডি, অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ সমেত বেশ কয়েকটি দলের সদস্যদের বিরোধিতার মধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত বিলটি পেশ করে তিনি বলেন, আজ এক ঐতিহাসিক দিন। ইতিহাস গড়লাম আমরা।
মুসলিম মহিলা (বিবাহ সংক্রান্ত অধিকার রক্ষা) বিল নামে পেশ করা বিলটি শুধুমাত্র তাৎক্ষনিক তিন তালাক বা তালাক-ই-বিদ্দত প্রথার ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। বিলে তালাক পাওয়া মহিলাকে নিজের ও নাবালক সন্তানদের জন্য পর্যাপ্ত খোরপোশ বা ভাতা চেয়ে ম্যাজিস্ট্রটের কাছে দাবি জানানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। নাবালক সন্তানদের হেফাজতও চাইতে পারবেন তিনি। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ম্যাজিস্ট্রেট। প্রস্তাবিত বিলটি আইন হলে জম্মু ও কাশ্মীর বাদে বাকি ভারতে কার্য্যকর হবে। বিলে তাৎক্ষনিক তিন তালাক জামিন অযোগ্য অপরাধ বলা হয়েছে, যার সাজা হবে তিন বছর কারাবাস, জরিমানাও। লিখিত, মৌখিক ও ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে অর্থাত ইমেল, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপে, যে কোনও ভাবেই দেওয়া তাৎক্ষনিক তিন তালাক অন্যায়, বাতিল ধরা হবে বিলে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বেআইনি ঘোষিত হলেও তাৎক্ষনিক তিন তালাক দেওয়া বন্ধ না হওয়ায় আইন করে এই কুপ্রথা অবসানের উদ্যোগ, এ কথা জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এই আইনের সঙ্গে কোনও সম্প্রদায় বা ধর্মের ব্যাপার নেই, মহিলাদের সম্মান, ন্যয়বিচার দেওয়াই এর উদ্দেশ্য। প্রস্তাবিত আইনে সংবিধানে সুরক্ষিত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হবে, বিরোধী শিবিরের একাংশের এই আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, তিন তালাকের শিকার মহিলাদের মৌলিক অধিকার আছে কি নেই, সেটাই ঠিক করবে সংসদ।


প্রতীকী চিত্র

এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাৎক্ষনিক তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধের স্বীকৃতি দিতে আনা বিলটি পাশ করার জন্য ঐকমত্য গড়ে তোলার কথা বলেছেন। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার বিজেপির সংসদীয় দলের সাপ্তাহিক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। বিলে মুসলিম মহিলাদের লিঙ্গ সাম্য, সম্মান, সুরক্ষা দিতে চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। কুমারও বলেন, আজ এক ঐতিহাসিক দিন। মোদী সরকার এমন এক বিল আনছে যার মাধ্যমে এক বিরাট সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজ্যসভায় বিরোধীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সেখানে বিলের ওপর ঐকমত্য গঠনের ব্যাপারে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, লোকসভায় বিলটি পাশ হলেই সরকার সহমত তৈরির উদ্যোগ নেবে, বলতে গেলে তা শুরু হয়েই গিয়েছে। সরকারি একটি সূত্রে আগেই শোনা গিয়েছে, রবিশঙ্কর প্রসাদ এর মধ্যেই বিলটি অনুমোদনের ব্যাপারে তৃণমূল, বিজেডি ও বাকি দলগুলির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।