অরিন্দম সেন,( আলিপুরদুয়ার):  পড়াশোনা ছেড়ে পেটের দায়ে বেছে নিয়েছিলেন গাইডের জীবিকা। ২৪ বছরের অভিজ্ঞতায় নখদর্পণে বক্সার জঙ্গলের অলিগলি। অনায়াসে বলতে পারেন বাংলা, হিন্দি, গোর্খালি এমনকী ইংরাজিও। আর তাই গবেষকরা যখনই বক্সার জঙ্গলে আসেন ডাক পড়ে গাইড নেত্র প্রসাদের।


বক্সার সেই ছাপোষা ফরেস্ট গাইডের জীবনীই ২৭২ পাতার উপন্যাসে লিখে ফেলেছেন প্রবাসী ভারতীয় নীতিন শেখর। বইয়ের নাম ' দ্য হোয়াটস লেফট অফ দ্য জাঙ্গল বুক'। বিশ্ব বন্যপ্রাণ সংস্থা (ডাব্লুডাব্লুএফ) ইন্ডিয়ার কো-অর্ডিনেটর তথা আমেরিকাবাসি নীতিন ২০১০ সালের শেষের দিকে গবেষণার কাজে এসেছিলেন বক্সার জঙ্গলে। তখন তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সে সময়ই তাঁর পরিচয় নেত্র প্রসাদের সঙ্গে। টানা তিন বছরের গবেষণা চলাকালীন এই গাইডের কার্যক্রমে বেশ রোমাঞ্চিত হয়েছিলেন নীতিন। তাদের দু-জনের মধ্যে গড়ে ওঠে নিবিড় বন্ধুত্বের সম্পর্ক।

গবেষণার মাঝে নীতিন কখন যে তাঁর জীবন নিয়ে আস্ত একটা উপন্যাস লিখে ফেলেছেন জানতেন না খোদ নেত্র প্রসাদই। হঠাৎই ইমেলে তাঁর কাছে এসে পৌঁছায় নিজেরই জীবনের পাণ্ডুলিপি। আর তারপরেই বন্ধু নীতিনের ফোন।

চমকের ওপর চমক। নীতিন বন্ধুকে জানান, তাঁর জীবনী ছাপা হবে হ্যারি পটার খ্যাত জে কে রাউলিং-এর প্রকাশনা সংস্থা থেকে। কাহিনী শুনে তা ছাপার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন স্বয়ং জে কে রাউলিংই। ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়ে গেছে সমস্ত চুক্তি। জুলাই মাসে নেত্র প্রসাদকে  ক্যালিফোর্নিয়ায় যাওয়ার আমন্ত্রনও জানিয়েছেন নীতিন। আমন্ত্রণ পেয়ে ইতিমধ্যেই পাসপোর্ট এবং ভিসার জন্যও আবেদন করেছেন নেত্র প্রসাদ। এ বছরের শেষের দিকে সম্ভবত প্রকাশ পেতে চলেছে বক্সার গাইড নেত্র প্রসাদ কে নিয়ে লেখা উপন্যাস 'দ্য হোয়াটস লেফট অফ দ্য জাঙ্গল বুক'। তবে বন্ধুকে এখনই খসড়া প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন লেখক।

বক্সার অখ্যাত গাইডের গল্প আমেরিকাবাসী ভারতীয় গবেষকের কলমে স্থান পেতে চলেছে বিশ্বের দরবারে। আর তার সঙ্গে নাম জুড়ছে হ্যারি পটারের স্রষ্টা জে কে রাউলিং-এর। নেত্র প্রসাদকে নিয়ে উচ্ছসিত বক্সারবাসী। আর স্বপ্নের ঘোর যেন কাটতেই চাইছে না স্ত্রী, মা, ছেলে, মেয়ে আর নেত্র প্রসাদের।