নয়াদিল্লি: করোনাভাইরাসজনিত আতঙ্কের মাঝে এবার ছড়িয়েছে বার্ড ফ্লু বা অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা। এখনও পর্যন্ত দেশের সাত রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে পাখির এই মারণ রোগ। রান্না করা পোলট্রি পণ্যের মাধ্যমে মানুষের শরীরে বার্ড ফ্লু-র সংক্রমণ মানুষের শরীরে ঘটতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করেন। কিন্তু এই ধারনা ঠিক নয় বলেই জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, রান্না করা পোলট্রির খাবার থেকে  সাধারণত এই ভাইরাস মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয় না। কারণ, এই ভাইরাস তাপে ধ্বংস হয়ে যায়। তাপে এই ভাইরাসের শক্তি কমে যায় বা মরে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বার্ড ফ্লু বা অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা পাখিদের এক ধরনের জ্বর। যার জন্য দায়ী H5N8 ভাইরাস। এই ভাইরাসের উৎপত্তি হয় স্বাভাবিকভাবে জলজ পাখিদের মধ্যে। তা ঘরোয়া পোলট্রিতেও সংক্রমিত হতে পারে। এমনকি সংক্রমণ ছড়াতে পারে অন্যান্য পাখি ও পশুদের মধ্যে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র নির্দেশিকা অনুযায়ী, যাতে মাংস কোনওভাবেই কাঁচা থেকে না যায় (মুরগী, হাঁস, ডিম), সেজন্য ৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা তার বেশি তাপমাত্রায় রান্না করা নিরাপদ।


নয়াদিল্লির এক হাসপাতালের কনসালট্যান্ট (পালমোনলজি) রিচা সারিন বলেছেন, এই ভাইরাস উত্তাপে ধ্বংসযোগ্য। যে তাপমাত্রায় খাবার রান্না হয়ে থাকে, তাতে এই ভাইরাস মরে যায়। এখন যখন বার্ড ফ্লু সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তখন লোকজনের ভালোভাবে রান্না করা পোলট্রিই খাওয়া উচিত। সেইসঙ্গে মাঝেমধ্যেই হাত ধোয়ার অভ্যেস বজায় রাখতে হবে।
যে ভাইরাসের ফলে বার্ড ফ্লু হয়, তা সাধারণত মানব দেহে ছড়ায় না। কিন্তু বিরল ঘটনা হিসেবে মানব দেহে এই ভাইরাস সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে। বিশেষ করে যাঁরা ঘরোয়া ক্ষেত্রে আক্রান্ত পোলট্রিতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের একটা আশঙ্কা থেকেই যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোলট্রিজাত পাখি হাতে ধরার পর অন্তত ২০ সেকেন্ড গরম জলে হাত ধুয়ে নেওয়া দরকার।
জয়পুরের এক হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেছেন, এই ভাইরাস আক্রান্ত পাখির সংস্পর্শে এলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির চোখে, নাকে বা মুখে বা পাখিদের মলমূত্র থেকে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। অসুস্থ কোনও ব্যক্তির থেকে অন্যজনের মধ্যে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের ঘটনা খুবই বিরল। এক্ষেত্রে খুব বেশি তথ্য নেই। কিন্তু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশিকা পালন করা দরকার।
পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে সংক্রামক ভাইরাস বার্ড ফ্লু। এর যে স্ট্রেন তার মানুষ থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমণে ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না। তবে এর মিউটেশন ঘটতেই পারে। কাজেই ভবিষ্যতে যদি মিউটেশন ঘটে, তাহলে এর মানুষের থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে মহামারীর কারণ হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।
বার্ড ফ্লু সাধারণত মানুষের শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমিত হয়। এর উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, সর্দি, গলা ব্যাথা, কাশি ও পেশিতে যন্ত্রণা ইত্যাদি।
সারিন জানিয়েছেন, গুরুতর ক্ষেত্রে তা এআরডিএস, বহু অঙ্গে ছড়িয়ে পড়া, এমনকি মৃত্যুরও আশঙ্কা থাকে। অতীতে বার্ড ফ্লু-র যে বিক্ষিপ্ত তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে এর মৃত্যুর হার খুবই বেশি, প্রায় ৬০ শতাংশ। কাজেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা খুবই প্রয়োজনীয়।
এজন্য পরিবেশের পাখিদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই ভাইরাস ছড়ায় আক্রান্ত পাখির লালা, বিষ্ঠা থেকে।
এক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, পরিযায়ী এই ভাইরাস বায়ুবাহিত। অসুস্থ বা মৃত কোনও পাখি দেখলে অবশ্যই স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগে খবর দেওয়া উচিত। উপযুক্ত মাস্ক, গ্লাভস ও ডিসইনফেকট্যান্ট ছাড়া প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।